শনিবার, ডিসেম্বর ৭

নেকাব না খোলায় সেমিস্টার ফাইনালের ভাইভা হয়নি ইবি ছাত্রীর

নেকাব না খোলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে বিভাগীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা না নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এ ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ উঠে। নেকাব খুলতে না চাওয়ায় অন্য সবার ভাইভা নিলেও ওই ছাত্রীর ভাইভা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

গত ১৩ ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভায় নেকাব পরে অংশ নেয় ওই ছাত্রী। এ সময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন। তখন তিনি নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সকল সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা। পরে নেকাব না খোলায় তার ভাইভা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান শিক্ষকরা।

এ ঘটনার দিন ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, নেকাব না খোলায় সে দিন অন্য সবার ভাইভা নিলেও তার ভাইভা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে নেকাব খুলে ভাইভায় অংশ নিলে আবারও তার ভাইভা গ্রহণ করা হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ওই শিক্ষার্থী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে অসম্মতি জানানোয় এখনও পর্যন্ত তার ভাইভা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে ভাইভায় নেকাব খোলার জন্য রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করেছি। তাকে বুজিয়েছি যে চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির ভাইভাতে গেলে রিটেনে ভালো করলেও তোমার চাকরি হবে না। যখন সে রাজি হয়নি তখন আমরা পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ভাইভা থেকে বের করে দিয়েছি। এরপর আমরা কয়েক দফায় তার সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু সে তার অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।

পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা বলেন, ভাইভা বোর্ডে আমরা তাকে বলেছিলাম সে যে আমাদের স্টুডেন্ট তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি। নারী শিক্ষিকা দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা অবজেকশন (অভিযোগ) জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এভাবে করলে তাহলে আমরা মার্ক দিব না।

বিভাগের সভাপতি শিমুল রায় বলেন, এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে ফিমেল টিচার দ্বারা রিকগনাইজ করেছিলাম। ভাইভাতেও ফিমেল টিচার ছিলেন, কিন্তু সব সময় তো থাকে না, সেক্ষেত্রে আমরা কি করব? সে জায়গা থেকে আমরা তাকে রিকোয়েস্ট করছিলাম। কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড় থাকায় তার ভাইভা নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. শাহজাহান মণ্ডল বলেন, কেউ তার ধর্মীয় জায়গা থেকে নেকাব মেইনটেইন করতে চাইলে তাকে সেই স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে ছাত্রীদের পরীক্ষা ও ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিৎ।

ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের যায়গা থেকে কেউ যদি নেকাব পরে – তাহলে শিক্ষিকাদের দ্বারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষা ও ভাইভাতে সুযোগ দেওয়া যায়। তবে ভাইভাতে যেহেতু আই কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেওয়া ভালো – কিন্তু তাদের জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি যেহেতু জানি না, সে ক্ষেত্রে তা জেনে এ বিষয়ে কথা বলবো।

এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এই কাজটি করা উচিৎ হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এ রকম শিক্ষার্থীরা থাকে – আমরা সব সময়ই নারী শিক্ষকের মাধমে তাদের আইডেনটিফাই করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তাদের (শিক্ষকদের) পেনাল্টি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *