শনিবার, ডিসেম্বর ৭

প্রতিমন্ত্রী হলেন আরও ৭জন, ৪জনই সংরক্ষিত নারী আসনের

মন্ত্রিসভায় আরও সাতজন প্রতিমন্ত্রী স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন সরাসরি নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছেন। আর চারজন সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

নতুন স্থান পাওয়া সাতজনের মধ্যে সরাসরি নির্বাচিতরা হলেন শহীদুজ্জামান সরকার (নওগাঁ–২), আবদুল ওয়াদুদ (রাজশাহী–৫), নজরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম–১৪)। রোকেয়া সুলতানা, শামসুন নাহার, ওয়াসিকা আয়শা খান ও নাহিদ ইজাহার খান সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

শহীদুজ্জামান সরকার পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন আবদুস সালাম। আবদুল ওয়াদুদ দায়িত্ব পেয়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন তাজুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম চৌধুরী শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এই মন্ত্রণালয়ে কোনো পূর্ণ মন্ত্রী নেই। ফলে তিনি মন্ত্রীর দায়িত্বই পালন করবেন।

রোকেয়া সুলতানা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন সামন্ত লাল সেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন শামসুন নাহার। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী।

অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবার এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন ওয়াসিকা আয়শা খান। নাহিদ ইজাহার খান পেয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এই মন্ত্রণালয়েও পূর্ণ মন্ত্রী নেই। ফলে নাহিদ ইজাহার মন্ত্রণালয়ের পুরো দায়িত্ব পালন করবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন সাতজনকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরীসহ রাজনীতিক ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

এর আগে গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। এর মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ২৫ জন। প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। নতুন সাতজন নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৮–তে। এখন সব মিলিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৪৪। গত মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৯।

বিগত মন্ত্রিসভায় তিনজন উপমন্ত্রী থাকলেও এখনো বর্তমান মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। সরকার ও আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, পরে আরও কয়েকজন উপমন্ত্রী যুক্ত হতে পারেন।

শহীদুজ্জামান সরকার পেশায় আইনজীবী। তিনি সংসদের ডেপুটি স্পিকার হতে পারেন, গত সংসদে এই আলোচনা ছিল। কিন্তু পরে তাঁকে একটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়েছিল। এর আগে দশম জাতীয় সংসদে হুইপ ছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নওগাঁর শহীদুজ্জামান সরকার দীর্ঘদিন ধরে সরকারপ্রধানের দৃষ্টিতে ছিলেন। এবার ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠনের সময় শহীদুজ্জামান সরকার নির্বাচিত হননি। তাঁর আসনের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নতুবা প্রথম দফাতেই তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান পেতেন।

সেই তুলনায় আবদুল ওয়াদুদ (দারা) ও নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়াকে ‘চমক’ বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। কারণ, এ দুজন একেবারেই আলোচনায় ছিলেন না।

টাঙ্গাইলের শামসুন নাহার চাঁপা ছিলেন ছাত্রলীগের নেত্রী। এরপর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৫ সালে অবসরে যান তিনি। ২০১৯ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ২০২২ সালে আবার তাঁকে একই পদে নির্বাচিত করা হয়। শামসুন নাহার সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের বোন।

রোকেয়া সুলতানা পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর তিনিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক হন ২০১৯ সালে। ২০২২ সালের জাতীয় সম্মেলনে আবার একই পদে দায়িত্ব পান তিনি।

জয়পুরহাটের রোকেয়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মাহতাবউদ্দিনের সন্তান। আওয়ামী লীগের দুটি সম্পাদকীয় পদে থাকা এই দুই নারী এবারই প্রথম সংরক্ষিত আসনের সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্থান পেলেন মন্ত্রিসভায়।

আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, এবার মন্ত্রিসভায় দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে আগেরবারের চেয়ে বেশি নেতারা মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। এ ধারায় রোকেয়া সুলতানা ও শামসুন নাহারের মতো ওয়াসিকা আয়শা খান প্রতিমন্ত্রী হলেন।

ওয়াসিকা আয়শা খান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে। পেশায় ব্যাংকার ছিলেন। গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া যে অল্প কজন দ্বিতীয়বারের মতো সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন, তার মধ্যে তিনি অন্যতম। গত সংসদে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ওয়াসিকাকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় ছিল। তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ভাবা হয়েছিল আগের মেয়াদেও।

বিগত সংসদেও সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ছিলেন নাহিদ ইজাহার খান। রাজনীতিতে এতটা পরিচিতি না থাকলেও গত বছর ঘটনাপ্রবাহের ৪৭ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা বাবা হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে মামলা করে আলোচনায় আসেন তিনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর সেনাবাহিনীতে পাল্টাপাল্টি ক্যু চলতে থাকে। এর মধ্যে ৭ নভেম্বর তাঁর বাবা কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন সেনাপ্রধান প্রয়াত জিয়াউর রহমান এবং জাসদের প্রয়াত নেতা কর্নেল আবু তাহেরকে হুকুমের আসামি করে মামলা করেন নাহিদ ইজাহার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *