|| ড. সামিউল হক, ঢাকা ||
بسم الله الرحمان الرحيم
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!
প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা আশা করছি, সকলেই রমজান মাসের আগমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যাতে সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করা যায়।
বেশ কয়েকদিন যাবৎ ইফতারের সহিহ সময়সূচী“ মতভেদ লক্ষ করছি। এরূপ দ্বিমত থাকা অস্বাভাবিক নয়। কারণ আমাদের সমাজে সূর্য ডোবার ২-৩ মিনিট পরেই মাগরিবের আজান দেয়া হয়। আর তাই আহলে সুন্নতের ভাইয়েরা দেরি না করে ইফতার করে থাকেন। এটা ইমাম আবু হানিফার ফতোয়া মতে জায়েয। আর লা মাযহাবিদের ফতোয়ামতে সূর্য ডোবার পরই মাগরিবের আজান বা ইফতার করা জায়েয রয়েছে। যদিও কোরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ((ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ)) অতঃপর রোযা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।
আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে এরশাদ করেন:
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
রমজানের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সহবাস বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোষাকস্বরূপ। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে খেয়ানত করেছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। তাই এখন (রমজানের রাতে) তোমরা সঙ্গম করো (করতে পারবে) এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবধ্য করেছেন, তা কামনা কর। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালোরেখা থেকে ঊষার সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রকাশ না হয়। অতঃপর রোযা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। আর তোমরা মসজিদে ইতেকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে সঙ্গম করো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই এই সীমারেখার কাছেও যেয়ো না। এভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারে।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইফতার সম্পর্কে স্পষ্টকরে বলেছেন যে, ((ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ)) অতঃপর রোযা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।
কিন্তু সব মাযহাবের ফতোয়ামতেই মাগরিবের আজানের পরেই ইফতার করা জায়েয আছে। ঠিক যেভাবে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনী ফতোয়া দিয়ে বলেছেন:
طلوع فجر صادق (وقت اذان صبح) است؛ پس اگر با شنیدن اذان، به طلوع فجر اطمینان پیدا کند، نباید مبطلی انجام دهد، بنابراین اگر لقمه ای در دهان وارد شد، نباید فرو برد. اما اگر اطمینان به دخول وقت ندارد، می تواند چیزی بخورد.
موقع افطار نیز با شروع اذان مغرب، اگر یقین حاصل شود که وقت داخل شده، اشکال ندارد و اگر شک یا گمان دارد، افطار جایز نیست.
منبع: کتاب «آموزش مصور احکام» مطابق با فتاوای آیت الله العظمی خامنه ای، احکام عبادات
আয়াতুল্লাহ খামেনী তাঁর ফতোয়ায় সুস্পষ্ট করেছেন যে, মাগরিবের আজান যথেষ্ট নয় বরং ইফতারের সময় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।
এ কথা থেকে স্পষ্ট হয় যে, মাগরিবের আজান ইফতারের মানদন্ড হলেও ইফতার করার জন্য ইফতারের সময় সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে ইফতার করা জায়েয হবে না।
তবে এটাও স্পষ্ট যে, যদি ইফতারের সময় না হয় তবে মাগরিবের আজানও দেয়া যাবে না। কারণ তখন মাগরিব নামাযের সময় হয়নি। কিন্তু কোন মাযহাবের ইমাম যদি ফতোয়া দিয়ে থাকেন যে, মাগরিবের আজানের সাথে সাথেই ইফতার করা যাবে। তবে ঐ মাযহাবের অনুসারিদের জন্য ইফতার করা জায়েয রয়েছে। যদিও সূর্য ডোবার সাথে সাথে আজান দেয়া হয়। কারণ এটা তাকলিদের বিষয়, আর তাকলিদের বিষয়ে এজতেহাদ করা যাবে না। যদি কেউ ইজতেহাদ করে তবে তার জন্য তাকলিদ করা জায়েয নেই।
জাফরি মাযহাবের ফতোয়ামতে সূর্য ডোবার ১৬-১৮ মিনিট পরে ইফতারের সময় হয়। আর যারা এই মাযহাবের অনুসরণ করে থাকে, তাদের জন্য ইফতারের সময় হবার আগে মাগরিবের আজান দেয়াও জায়েয নেই। মূল কথা হলো যখন মাগরিবের নামায পড়া যায়েয, তখন থেকে ইফতার করাও জায়েয। কেউ যদি তখন নামায না পড়ে ইফতার করে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মাগরিবের সময় শুরু হয় সূর্য ডোবার পর, যখন সূর্যের লাল আভা চলে যায় তখন এবং তখন ইফতারও করা যায়। আর সেই লাল আভা দূরহতে প্রায় ১৬-১৮ মিনিট সময় লাগে। কারণ রাতের শুরু বলতে এই মাযহাবের প্রবক্তা সূর্য ডোবাকে মানদন্ড হিসেবে ধরেননি বরং সূর্য ডোবার পর যখন সূর্যের লাল আভা চলে যায় ঐ সময়টাই ইফতারের মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন।
হানাফি মাযহাবের ফতোয়া মতে সূর্য ডোবার প্রায় ৪ মিনিট পর রাতের শুরু হয়।
আর জাফরি মাযহাবের ফতোয়া মতে সূর্য ডোবার ১৬-১৮ মিনিট পর রাতের শুরু হয়। ফলে তখনই মাগরিবের আজানের সময় হয় এবং একইসময় ইফতারেরও সময় হয়।
আমার মতে, কোন এক মাযহাবের ফতোয়া অন্য মাযহাবের অনুসারিদের উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।
লেখক: সদস্য, সাইন্টিফিক এন্ড রিসার্চ বোর্ড, আল মুস্তাফা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।