বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ: কিছু প্রস্তাবনা

বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নিয়মিত পদ হলো প্রফেসর পদ। অতীতে এ পদে অধিষ্ঠিত হতে আন্তর্জাতিক মানের অনেক বাঘা বাঘা শিক্ষকও ব্যর্থ হয়েছেন, এর প্রমাণ আমাদের সামনে অহরহ। যেমন- ড. মোঃ শহিদুল্লাহ।

বর্তমানে আপগ্রেডেশনের কারণে পিএইচডি এবং আর্টিকেল থাকলে ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই এ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পরিচালনার জন্য এ প্রফেসরদের থেকে যে কোনো একজন শিক্ষাবিদকে চ্যান্সেলর মহোদয় ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
যদিও গত তিন দশক থেকে দু চারজন ছাড়া আমরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই সেই মানের কোনো ভাইস চ্যান্সেলর পাইনি।

দলীয় সরকারের আমলে দলীয় প্রফেসর ছাড়া ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছেন এমন রেকর্ড সম্ভবত পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের কেউ কেউ এ পদে অধিষ্ঠিত হতে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। সামর্থ্যানুযায়ী উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগও করেন। এবং সফলও হন অনেকেই।

দেশে অর্ধশতাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরের তিনটি প্রশাসনিক পদ- ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং ট্রেজারার।

বর্তমানে পদত্যাগের কারণে এর অধিকাংশ পদই খালি হয়েছে বা হচ্ছে। এ ছাড়াও বেসরকারি শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়েরও একই অবস্থা।

তাই এ তিনটি পদ পূরণের জন্য সরকারি অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৪×৩=১৬২ জন প্রফেসর অনুরূপভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০৬×৩=৩১৮ জন প্রফেসর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

অর্থাৎ এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়েসমূহের সর্বোচ্চ ৩টি পদে নিয়োগের জন্য ৪৮০ জন প্রফেসরের প্রয়োজন।

বর্তমান সময় নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়। কোথাও কাউকে নিয়োগ দিতে হলে সরকারকে ভেবেচিন্তে নিয়োগ দিতে হচ্ছে, যাতে দলীয় কেউ অধিষ্ঠিত না হয়। যাতে সরকার কোন সমালোচনার মুখে না পড়ে।

এমত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এত জন নির্দলীয় যোগ্য প্রফেসর বের করা এ সরকারের পক্ষে কতটুকু সম্ভব হবে জানি না।

গত সরকারের আমলেও একটি সার্চ কমিটি হয়েছিল। সেই কমিটি সকল বিশ্ববিদ্যালয় হতে টপ টেন প্রফেসরদের তালিকা এবং বায়োডাটা সংগ্রহ করে। যদিও সেটা ছিল আই ওয়াশ। সরকার তার পছন্দমত প্রফেসরদেরকেই ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়।

তাই আমি একটি সার্চ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করছি এবং সাথে কিছু প্রস্তাবনাও রাখছি।

বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ১৫ হাজারের অধিক শিক্ষকের মধ্যে কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ প্রফেসর রয়েছেন। আবার এদের মধ্যে সহস্রাধিক প্রফেসর রয়েছেন গ্রেড-১ প্রাপ্ত।

এ বিষয়ে একটি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করা যেতে পারে। এবং প্রতিটি বিষয়ে পয়েন্ট বা নাম্বার নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রাপ্তনাম্বারের ভিত্তিতে একটি তালিকা করা যেতে পারে।

১. শিক্ষা জীবনে অন্তত একটি প্রথম বিভাগ/ শ্রেণি থাকবে (তৃতীয় শ্রেণি থাকবে না)।
২. সিনিয়র প্রফেসর হবেন।
৩. গ্রেড-১ প্রফেসর হবেন।
৪. প্রফেসর পিএইচডি ডিগ্রিধারী হবেন।
৫. কমপক্ষে তিনজনকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করতে হবে।
৬. অন্ততঃ বিশোর্ধ প্রবন্ধ থাকা চাই।
৭. প্রশাসনিক পদ অন্ততঃ চেয়ারম্যান/ডিন থাকা চাই।
৮. শিক্ষকতা জীবনে প্রতিটি কোর্সের অন্ততঃ অর্ধেক ক্লাস করেছেন এমন সার্টিফিকেট থাকা চাই।
৯. যোগ্য সৎ নিষ্ঠা ছিলেন এমন প্রমাণ থাকা চাই।
১০. দু-চারটি গ্রন্থও থাকা চাই।
১১. বিদেশী জার্নালে প্রবন্ধ/সেমিনার/সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণকারী হওয়া চাই।
১২. সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের সাথে তার সদাচরণের সার্টিফিকেট থাকা চাই।
১৩. স্ববিশ্ববিদ্যালয়ে তার ওজনটুকুও যাচাই করা চাই।
১৪. ভালো শিক্ষক মর্মে ছাত্রদেরও একটি সার্টিফিকেট থাকা চাই।
১৫. শিক্ষা দেশ জাতির উন্নয়নের চিন্তক মর্মে প্রমাণ থাকা চাই। এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় অন্ততঃ ২/৪ টা লেখা থাকা চাই।
১৬. পারিবারিক ঐতিহ্যটিও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
১৭. ছাত্র জীবন থেকে শিক্ষকতা জীবন পর্যন্ত দেশজাতির উন্নয়নে কিছু করেছেন মর্মে প্রমাণ থাকা চাই।
১৮. কোন চ্যারিটি কাজে অংশগ্রহণ করেছেন মর্মেও প্রমাণ থাকা চাই।
১৯. কোন পদে থাকাকালীন আর্থিক বিষয়টিও যাচাই করা চাই।
২০. দেশ জাতির ক্ষতি হয়েছে এমন কোনো কাজে অংশগ্রহণ নেই মর্মেও প্রমাণ থাকা চাই।

এছাড়া আরো যে বিষয়গুলো সার্চ কমিটি উপযুক্ত মনে করবে, তা নির্ধারণ করে খুব দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা এটাই সময়ের দাবি। এটা জাতিরও প্রত্যাশা।

এগুলো একান্তই আমার নিজস্ব মতামত। এর চাইতে আরো ভালো পরামর্শ আসতে পারে এবং আসা উচিত। এ সময় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ দেশ জাতিকে নিয়ে চিন্তা না করলে দেশ জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *