মঙ্গলবার, মে ২০

“সেঁজুতি”_কবিতা

সেঁজুতি তুমি কেমন আছো?
হয়তো আধো আধো জোৎস্না রাতে
পায়রার ডাকে মজে আছো ফুলশয্যায়।

পুষ্পাঞ্জলির মিছিলে যৌবনের উন্মাদনায়
কালো গোলাপের পাপড়ি ছুঁয়ে
নিঝুম রাতের গল্প বুনাচ্ছো হয়তো তুমি।

আর আমি আঁধার রাতে
ল্যাম্পপোষ্টের নিচে বসে করছি পুঁথিপাঠ।
” উড়ে গেলে সোনাবান,উড়ে গেলে,
পিছনে ইছামতী নদীর গল্প ফেলে “।

প্রত্যুত্তরে তুমি হয়তো বলবে—-
” বিরহের পালক ছুঁয়েই থাকো পড়ে,
নিশাচর পাখি হয়ে রাত থেকে প্রতি ভোরে “।

হা হা করে হেসে উঠে আবারো শুধাই তোমায়
সেঁজুতি তুমি কেমন আছো?
তোমার হাতের কাঁকনবালা এখনো কি বাজে?
ডজনখানেক কালোটিপ এখনো কি ভেনেটি ব্যাগে থাকে?

কি যে বলো না তুমি?
আমি এখন নতুন শহরে নাগরিক সনদ নিয়ে আছি
ড্রেসআপ পাল্টে রঙধনুর সাত রঙে আছি মিশে।

তারপর আমার বন্দরে থাকা জাহাজের মাস্তুলে উঠে
তাকাই সমুদ্রের ওপারে ——
দেখি স্বচ্ছ আর ঘোলা জল। আর এ জলেই নিশ্চিহ্ন
হয়েছে আমার অতীতের বর্ণমালা।

সেঁজুতি তুমি তো আছো? নতুন রঙ তুলির আঁচড়ে
আর আমি তো আছি স্বপ্নের কফিনে।
যে কফিনে পড়ে না সূর্যের কিরণ আর পুষ্পার্ঘ্য।

সেঁজুতি তুমি কেমন আছো?
হয়তো বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিত্য ছুটে যাও তুমি
বেঞ্চে বসে আইসক্রিম তোলো মুখে
স্বপ্নের নায়কের হাত ধরে ডুবে থাকো গানের রাজ্যে।

আর আমি দোতারা হাতে ছুটি গাঁয়ের বাটে
দোয়েল শ্যামা আর কাকাতুয়াকে শোনাই গান
কথা বলি বালিহাঁসের সনে,
ভাঙা স্বর আর ছেঁড়া দোতারার টান শুনতে চায় না কেউ
বালিহাঁসের মতো মাথা ডুবিয়ে মধ্য বিলের জলে
খুঁজি তোমার তিলক ঘেষা ঠোঁটের ঝরঝরে হাসি।

সেঁজুতি তোমার প্রতিটি ভোর হয়
রাতের রজনীগন্ধার আলিঙ্গনে
তোমার ফুলদানিতে গজায় স্রোতসিনি প্রেমের গল্প
সাদা কালো তোমার প্রিয় রঙের আল্পনা
আর আমি কাব্যের বাসরে নিত্য খুঁজি তোমায়
নিরাকার প্রেমের সুরের মূর্ছনায় কলমিফুলের ডগা
মাড়িয়ে গেয়ে উঠি —- ” তুমি আজ কতো দূরে “।

সেঁজুতি তুমি কেমন আছো?
তোমার হাতে সাদা রঙের ঘড়ির কাটা এখনো
কি ক্ষিপ্রতায় চলে?
হয়তো বলবে —— আরে না,
আমার ঘড়ির কাটা থেমে গেছে বাসর রাতের যানযটে।
আকাশী রঙের শাড়ির আঁচলে থাকে এখন
জীবন প্রবাহের চাবি। সংসার, দায়ভার আর
বাঙালি বধূদের কতো যে বিধিমালা।

তুমি কি এখনো কাব্যের প্লটে ঝড় তোলো?
উড়াও কি লাল সবুজের নিশান
আর বানাও কি নিখাদ প্রেমের গল্প কবিতা?
এখনো কি ব্যাগ কাঁধে ছুটে চলো সাহিত্য আসরে?

তোমার কলমের ক্ষিপ্রতা কমিয়ে বয়সের ভারে
এবার শ্রান্ত হয়ে বসো তোমার কাব্যচর্চার ছোট্ট কুটিরে।
বাস্তবতার পথ মাড়িয়ে আমি এখন তোমার থেকে
যোজন যোজন দূরে।

হ্যাঁ সেঁজুতি, আমার শহরে চন্দ্র সূর্য গ্রহ আছে
ঠিক আগের মতোই। কিন্তু প্রেরণার সূর্য ডুবে
আঁধার নামে আমার মনের রাজ্যে, তুমি নাই বলে।

সেঁজুতি তুমি কেমন আছো?
রাতের দ্বিপ্রহরে তোমার নরম হাতে
এখনো কি গিটার বাজাও? তোমার গিটারের সুরে
এখনো কি কোকিলের হাততালি পাও?
নিশাচর পাখি উড়ে বসে কি তোমার ডালে?

জ্বি, এখনো সুর তুলি, ফানুস উড়াই,
ফ্যাকাশে রঙে রাঙাই পৃথিবী,
অতৃপ্তির ঢেঁকুরে চায়ের কাপে তুলি ঝড়।
তারপরেও জানতে ইচ্ছে করে —–
সেঁজুতি তুমি কেমন আছো??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *