বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫

সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে ইবিতে প্রতীকী লাশ প্রতিবাদ

|| মো. মোসাদ্দেক হোসেন | ইবি প্রতিনিধি ||

সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘হত্যাকাণ্ডের কাফন ঘেরাও’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশপথে রক্তমাখা কালো কাফন বিছিয়ে দেওয়া হয়, যাতে কর্মকর্তাদের অফিসে প্রবেশের সময় ওই কাফনের ওপর দিয়েই যেতে হয়।

এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, “কোনো মানুষ, সিআইডি বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেউই বলতে পারছেন না কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত। আমি এই প্রশাসনের কাছেই বিচার চাইছি, কারণ আমি এখানে থাকতে পারছি না, খেতে পারছি না। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার মায়ের মতো। রাষ্ট্র যদি বাবা হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার মা। কিন্তু বারংবার প্রশাসন সিআইডির দোহাই দিয়ে দায় এড়াচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আর কতদিন লাগবে তদন্তে? তদন্তের নূন্যতম অগ্রগতিটুকু আমাদের জানান। আমার ভাইয়ের বুকের রক্ত মাটিতে, অথচ আমরা কিছুই জানতে পারছি না। তদন্তে যত কালক্ষেপণ করা হবে, তত বেশি প্রশ্ন উঠবে এবং আলামত মুছে ফেলার সুযোগ তৈরি হবে। এই ভয় থেকেই আমরা বারবার পড়ার টেবিল ছেড়ে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছি। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আমার ভাইকে মেরে থাকে এবং তার বিচার না হয়, তবে দিন দিন তার সাহস আরও বেড়ে যাবে। পরবর্তী টার্গেট হয়তো আমরাই, যারা বারেবারে বিচারের দাবিতে দাঁড়াচ্ছি। আজ আমি মারা গেলে আমার জন্য আর কতজন মানুষ দাঁড়াবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি রাষ্ট্রযন্ত্র বা পুলিশ প্রশাসনের ওপর শক্তভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন, তবে বিচার প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত হতো।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা এর কোনো সুরাহা খুঁজে পাইনি। সিআইডি এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করতে পারেনি এটি হত্যাকাণ্ড নাকি অন্য কিছু। যারা বর্তমানে সিআইডির দায়িত্বে আছেন, তাদের প্রতি আমরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। অনতিবিলম্বে তাদের সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে যোগাযোগ না করে থাকে, তবে তাদের চেয়ারে থাকার যোগ্যতা নেই। আর যদি যোগাযোগ করার পরও ঘটনার সুরাহা না হয়, তবে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকেও দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনার খুনিরা আমাদের সাথেই ঘুরে বেড়াচ্ছে কিনা তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাজিদ হত্যার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। ৬৯, ৯০ কিংবা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো আমরা আগামী দিনেও দাবি আদায়ে প্রস্তুত থাকব।”

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিআইডি বারবার আমাদের সাথে নাটক করছে। দফায় দফায় ১৫ দিন পর পর সময় নিয়ে সিআইডি কর্তৃপক্ষ কুষ্টিয়া থেকে একটি গল্প লিখে নিয়ে আসে এবং প্রক্টর অফিসে সেই নাটকের মঞ্চায়ন করে। আমরা এই নাটকের মঞ্চ ভেঙে দিয়ে সামনের কর্মসূচিতে যেতে চাই।

১৮ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে ট্রিপল মার্ডার ও মেইন গেটে মানুষের মস্তক কেটে ঝুলিয়ে রাখার মতো ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন নির্বিকার। ছয় মাস আগে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের কথা থাকলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। চিকিৎসাকেন্দ্রে প্যারাসিটামল ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। আমরা এই অথর্ব প্রশাসনের কাছে আর কিছু চাইতে আসিনি, খুব দ্রুতই আল্লাহ চাইলে এই তিনজনকে (ভিসি, প্রক্টর, ট্রেজারার) আমরা ক্যাম্পাস থেকে বিদায় করব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অদৃশ্য শক্তির কারণে সাংস্কৃতিক চর্চা ও মুক্ত চিন্তায় বাধা দিচ্ছে। গতকালও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সময় নিয়ে টালবাহানা করা হয়েছে এবং আয়েশা সিদ্দিকা হলে ছাত্রীদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যেখানেই মুক্ত চিন্তা ও সাংস্কৃতিক চর্চা হবে, ছাত্রদল সেখানেই তাদের পাশে থাকবে।”

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ৩ আগস্ট ভিসেরা রিপোর্টে তার মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে নিরাপদ ক্যাম্পাস ও হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *