
|| ডা. আনোয়ার সাদাত ||
আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। আর এ ক্ষোভের পিছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট কোনো ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব যখন দলীয় লেজুড়বৃত্তির ফলে ক্ষমতা কুক্ষিগত ও অর্থ সম্পদ লুটপাটের জন্য হয়, হোস্টেল দখল, সিট দখল, রুম দখল, ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি কাজ ও নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়, ভিন্ন মত বা বিরোধী দলের অনুসারীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়, তখনই ছাত্ররাজনীতির নামে এক ধরনের কুৎসিত রাজনীতি তৈরি হয় যার সঙ্গে যুক্ত থাকে জাতীয় রাজনৈতিক দল। ছাত্ররাজনীতির নামে যেখানে সমস্যা রয়েছে, তার সমাধান অবশ্যই দরকার।
ছাত্ররাজনীতিবিদদের বিভিন্ন অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত দুঃখজনক, এ সকল কারণে ছাত্ররাজনীতির একটি কলুষিত চেহারা মানুষের মনের ভেতর গেঁথে গেছে।
যে ছাত্ররাজনীতিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তি নেই, আন্দোলনের জন্য অর্থ বরাদ্দ নেই, ভবিষ্যৎ কোনো লোভনীয় পদের হাতছানি নেই। কোনো বিরোধী দল সরকার পতনের জন্যেও তাদেরকে অর্থ দিয়ে মাঠে লেলিয়ে দেয়নি। বরঞ্চ শিক্ষার্থীরা অন্যায় দেখে রাস্তায় নেমেছে। এবং শিক্ষার্থীরা যতদিন দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে সাধারণ মানুষ, বিশ্ব নাগরিকের ইসু নিয়ে রাস্তায় নামবে তখনই আমাদের ছাত্ররাজনীতি মানুষের কাছে তাদের হারানো অবস্থান ফিরে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে যদি এমন কোনো ছাত্র নেতৃত্ব দিতেন, যিনি কোনো একটি বিষয়ের প্রথম শ্রেণি পাওয়া শিক্ষার্থী, চার বছরের কোর্স চার বছরে শেষ করেছেন, তবে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা শ্রদ্ধা প্রকাশ পেত। কিন্তু আমাদের অনেক ছাত্রনেতা বছরের পর বছর হলো কামড়ে ক্যাম্পাসে পড়ে থাকেন, তাদের পড়ালেখার অগ্রগতি লজ্জাস্কর, তাদের আচরণ অগ্রহণযোগ্য।
বিগত ৩৪ বছরে বেশ কয়েকটি ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ছিল না। শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। এখান থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? নিকট অতীতে এ রকম শিক্ষার্থীরা দেশের স্বার্থে, শিক্ষার উন্নয়নে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
বিভিন্ন দেশেও শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে।
তাই ছাত্র রাজনীতির কারণে শিক্ষা অর্জনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বা কলুষিত রাজনীতি নির্ভর হবে এটা কাম্য নয়।
লেখক: ইসলামিক স্কলার, সাংবাদিক ও চিকিৎসক (খুলনা)।