শনিবার, ডিসেম্বর ২১

রাষ্ট্র পরিচালনার উপযুক্ত বিধান : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

রাষ্ট্র হলো মানব সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের সকলের সার্বিক কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার একটি বড় সংগঠন বা সংস্থার নাম। অন্যান্য সকল সংগঠন ও সংস্থার ন্যায় এটি পরিচালনার জন্য‌ও কিছু বিধিনিষেধ আবশ্যক।

অধ্যাপক গার্নারের মতে, “রাষ্ট্র হচ্ছে এমন একটি জনসমাজ যা সংখ্যায় অল্পাধিক-বিপুল; যা কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বাস করে, যা কোনো বাইরের শক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন অথবা প্রায় স্বাধীন এবং যার এমন একটি সুগঠিত শাসনতন্ত্র আছে; যার প্রতি প্রায় সকলেই স্বভাবত আনুগত্য স্বীকার করে”।(দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃ: ৫৩৮)

আমরা জানি এবং স্বীকার করি যে, এ সমগ্র সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে জড় ও জীব এ দু’ভাগে বিভক্ত করে এগুলোকে দু’টি বিধানের আওতায় পরিচালনা করেন। বিধান দু’টি হলো: ১. প্রাকৃতিক ২. নৈতিক বা আদর্শিক। সমগ্র জড়জগৎ ও জীবজগৎ পরিচালিত হয় প্রাকৃতিক বিধানের আওতায়। ব্যতিক্রম মানব গোষ্ঠী। মানুষ এক উদ্দেশ্যপূর্ণ ও মর্যাদাশীল সৃষ্টি। তাই মানুষ প্রাকৃতিক নিয়ম-বিধানের অধীন হওয়া সত্ত্বেও মানুষের মানবীয় বিশেষত্ব নিরূপণ করার জন্য তার প্রয়োজন একটি নৈতিক বা আদর্শিক বিধান। যা হবে মানুষের প্রধান চালিকাশক্তি ও অধিক শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক।

মানুষের জন্ম, মানবদেহের ক্রমবৃদ্ধি, দেহ সংস্থার অভ্যন্তরস্থ নিয়মাদি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ এ সব কিছুই প্রাকৃতিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, সচেতনতা, বিচক্ষণতা, স্মৃতিশক্তি, বাছাই ও গ্রহণ বর্জনের যোগ্যতা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ভালো-মন্দ কাজের প্রবণতা, আনুগত্য- বিদ্রোহ ইত্যাদি আদৌ বস্তুগত জিনিস নয়। তাই এগুলো বস্তু জগতে দৃঢ়ভাবে কার্যকর প্রাকৃতিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হওয়া অসম্ভব। মানুষের এ মানবীয় গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করার এবং সঠিক পথে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন স্বতন্ত্র আদর্শিক বিধান। তাইতো মহান সৃষ্টিকর্তা দয়াময় প্রভু, আল্লাহ তা’আলা প্রথম মানুষ ও নবী আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণকালে বলেছিলেন, “অতঃপর আমার নিকট থেকে তোমাদের নিকট যদি কোনো হিদায়াত পৌঁছে, তবে যারা আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিত হবে না।” (আল বাকারা: ৩৮)

আল্লাহ প্রদত্ত এই হিদায়াতই হলো আদর্শিক বিধান। মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসূলগণের মাধ্যমে এই বিধান মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন। এ বিধান খুবই ব্যাপক। মানব জীবনের কোনো একটি দিকও এ বিধানের আওতার বাহিরে নয়। এই বিধানের সামষ্টিক পরিচয় হলো ইসলাম।

আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্য) জীবন বিধান কেবল ইসলাম‌ই” (আলে ইমরান: ১৯)

অর্থাৎ মানব সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যে বিধান উপযুক্ত তা হলো, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ প্রদত্ত নৈতিক বিধান বা ইসলাম। আর রাষ্ট্র যেহেতু মানব সমাজেরই সুসংগঠিত বৃহত্তর রূপ বা সংস্থা; তাই এর পরিচালনার জন্য দুর্বল ও অক্ষম কোনো মানব দ্বারা রচিত বিধান প্রযোজ্য ও উপযুক্ত হতে পারে না। বরং তাই প্রযোজ্য হবে, যা মানব সমাজের জন্য প্রযোজ্য। এবং যা সবার স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত। আর তা হলো সর্বশক্তিমান আল্লাহ প্রদত্ত আদর্শিক বিধান-আল ইসলাম।

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহিম (রহঃ) বলেন, “ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ বিধান হিসেবেই নাযিল হয়েছে বলে, তাকে মানব জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য একটি সর্বাত্মক শক্তিকে নিয়োজিত করতে হবে। এই শক্তিই হচ্ছে রাষ্ট্র।” (ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা, পৃ-৪)

এর মানে হলো- রাষ্ট্র নামক সংগঠনটি জনগণের জন্য কল্যাণময় ও সার্বিকভাবে সফল হতে হলে, রাষ্ট্রেরই চাহিদা হলোঃ তার পরিচালনায় থাকবে- থাকতে হবে ইসলাম নামক পূর্ণাঙ্গ ও ত্রুটিমুক্ত জীবন বিধানকে। তাহলে বস্তু জগত যেমন আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধানের অধীনে পরিচালিত হয়ে সার্বিক কল্যাণের উৎস হয়ে আছে, তেমনিভাবে মানুষ আল্লাহর আদর্শিক বিধানের অধীন পরিচালিত হলে তা হবে তার জন্য সমূহ কল্যাণের কারণ। দয়াময় আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *