ঢাকাস্থ মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ডাটা সেন্টারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে গেছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি)। এতে সারাদেশের অন্তত ছয়শ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট সেবা। যেগুলো এখনও চালু আছে, সেখানেও অনেক ধীরগতি।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর’২৩) রাত সাড়ে দশটার দিকে গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আইএসপিএবি’র সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘যতটুকু খবর পেয়েছি লেভেল থ্রি, ম্যাক্স হাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট ও উইনস্ট্রিম আইআইজি পুড়ে গেছে। ফলে, আমরা এরই মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ হারিয়েছি। সারাদেশের ৫৫০-৬০০ আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রায় বন্ধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাজা টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ধারণা অনুযায়ী যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর যদি ডিভাইসগুলো পুড়ে যায়, তাহলে আরও বেশি সময়ও লাগতে পারে। তার আগ পর্যন্ত সারাদেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি থাকতে পারে।’
তবে ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণপূর্বক সেখানে ঢোকার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিস্থিতি দেখে ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে কত সময় লাগতে পারে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে বলে জানান এমদাদুল হক।
আইএসপিএবি’র মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা জানান, ‘সারাদেশে ৬-৭টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এগুলোতে আবার অন্তত ৬০০-৭০০ আইএসপির ডাটা রাখা থাকে। কোনো আইআইজি শাটডাউন করলে, সেখানে যাদের ডাটা থাকে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সেখানে ঢুকতে পারলে পরিস্থিতি দেখে ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে। যদি ডিভাইসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাহলে দ্রুতই আগের অবস্থায় ফেরানো যাবে। আর যদি ডিভাইস পুড়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহ নয়, তারও বেশি সময় লাগতে পারে।’
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসায়ীরা জানান, ‘আর্থের (আইএসপি প্রতিষ্ঠান) থেকে অনেকেরই ফেসবুক, ইউটিউব নেওয়া। ওদের সার্ভিস না পাওয়ায় আমাদের ইউটিউব, ফেসবুক ডাউন। এখন আমাদের গ্রাহকরাও ইউটিউবে ঢুকলে ডাউন পাবেন। ঠিকভাবে ভিডিও দেখতে পারবেন না। ফেসবুক চালাতেও সমস্যায় পড়ছেন।
মহাখালীর খাজা টাওয়ারে ইন্টারকানেক্ট এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) রয়েছে। ফলে দেশের সব মোবাইল অপারেটরদের সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা মোবাইলে নেটওয়ার্ক পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
বিশেষ করে এক অপারেটর প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য অপারেটরে ঠিকমত কল যাচ্ছে না। একাধিকবার ডায়াল করার পর কল ঢুকছে। নিরবচ্ছিন্ন কল করার সুবিধা ও ইন্টারেনট সেবা পাচ্ছেন না মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) আনুমানিক বিকেল পাঁচটায় রাজধানীস্থ মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। সেখানে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ধাপে ধাপে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দেয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাদের সহায়তায় যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী।