যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন এবং একইসঙ্গে গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করছে বাংলাদেশি তাসনুভা তাবাসসুম। মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে বেগম রোকেয়ার লেখা ‘সুলতানা’স ড্রিম’ গল্প। চলতি সেমিস্টারে একটি কোর্সে গল্পটি যুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানিয়েছেন তাসনুভা।
তাসনুভার দেওয়া খবরের স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি এক ফেসবুক পোস্টে তাসনুভা জানান, ‘অনুভূতিটা ঠিক কেমন হচ্ছে সেটা নিজেও বুঝতে পারছি না, পেটের ভেতরে হাজার প্রজাপতি উড়ে বেড়ানোর মতো অনেকটা। ঘটনাটা হয়তো তেমন কিছুই না, কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছু।
যখন আমি গত সেমিস্টারে আমার গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করলাম, তখন আমার প্রফেসরদের কাছে গিয়ে গিয়ে বলছিলাম– কীভাবে বেগম রোকেয়ার একশ বছর আগের ‘সুলতানা’স ড্রিম’ আজকের দিনের ‘বারবি’ সিনেমার সাথে ভীষণভাবে মিলে যায়। যেহেতু এখানে কেউই আগে বেগম রোকেয়ার নাম শোনেননি, তাই আমাকে প্রতিজনের কাছে প্রতিবার বেগম রোকেয়াকে এবং ‘সুলতানা’স ড্রিম’-এর কাহিনি কী এটা নিয়ে বারবার বলতে হয়েছে। তাদেরকে আমার কাছে থাকা বইটাও ধার দিয়েছিলাম পড়ে দেখবার জন্যে। তারা বইটা শুধু পড়েনই নাই, মুগ্ধ হয়ে খুঁজে খুঁজে এই বই কিনেছেন!’
‘আমি এতেই অত্যন্ত খুশি ছিলাম যে আমার আমেরিকান প্রফেসররা বেগম রোকেয়ার ভূয়সী প্রশংসা করছেন এবং তারা ভেবেছিলেন জিলম্যানের ‘হারল্যান্ড’ বুঝি প্রথম ফেমিনিস্ট ইউটোপিয়ান সায়েন্স ফিকশন যা ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। যখন দেখলেন ‘সুলতানা’স ড্রিম’ আরও আগে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তারা যারপরনাই অবাক হলেন!’
এরপরই তার সফল হওয়ার কথা জানিয়ে পোস্টে লিখেছেন, ‘এখানেই ঘটনার শেষ? আমাকে অবাক করে দিয়ে ঘটনা সেখানে শেষ হয়নি। আমার সুপারভাইজার এই সেমিস্টারে একটা নতুন কোর্স ডিজাইন করেছেন যেখানে তিনি সিলেবাসে বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানা’স ড্রিম!’ পড়াচ্ছেন কয়েকদিন আগে আমি যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম উনার সাথে, তিনি আমাকে সিলেবাস দেখিয়ে বললেন আমার ছাত্ররা এখন ‘সুলতানা’স ড্রিম’ পড়ছে এবং সবাই এই টেক্সট অসম্ভব পছন্দ করেছে!
আমি কিছুক্ষণ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তার কম্পিউটার স্ক্রিনের সিলেবাসের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মুখ দিয়ে একটা শব্দই বেরিয়েছে ‘সিরিয়াসলি?’ ডক্টর উডেন মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন- থ্যাঙ্কস টু ইউ ফর ইন্ট্রোডিউসিং মি উইথ হোসেইন’ (বেগম রোকেয়ার নাম লেখক হিসেবে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন লিখা বইতে, তাই নামের শেষাংশ বলেছেন)।
তিনি বেগম রোকেয়ার সমসাময়িক পরিবেশ, সমাজ নিয়ে আরও জানতে আগ্রহী। আমার মাথায় আর কিছুই ঢুকছিল না, আমি শুধু ভাবছিলাম আমেরিকার মিজৌরি নামক রাজ্যের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্ররা বেগম রোকেয়ার কথা জানবে, তার লিখা বই পড়বে.. আমার মতো তুচ্ছ-ক্ষুদ্র একটা মানুষ যে বেগম রোকেয়ার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যম হতে পেরেছে এই আনন্দ আমি কোথায় রাখব বুঝতে পারছিলাম না।
এই নিয়ে গণমাধ্যমকে তাসনুভা জানান, আমি আসলে নিজের মাস্টার্সের থিসিসের বিষয় হিসেবে বেগম রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম এবং বারবি সিনেমাকে বেছে নিয়েছিলাম ও এ জন্যই আমার প্রফেসরদের সঙ্গে সুলতানা’স ড্রিম এবং বেগম রোকেয়া বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে।