
|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||
কক্সবাজারে “মৎস্যচাষ উন্নয়ন কর্মসূচি (এআইপি) এবং টেকসই তৃতীয় পক্ষের সার্টিফিকেশন (টিপিসি) এর মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু মৎস্য উন্নয়ন” শীর্ষক এক সচেতনতা কর্মশালা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২১ জুন) কক্সবাজারের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র, কক্সবাজার এর সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজিনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এবং বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশন (বিএসএফএফ)-এর যৌথ আয়োজনে ও মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালার উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিকতা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য ও মৎস্যচাষ খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খাত জাতীয় জিডিপিতে ২.৪৩% অবদান রাখে, মোট জনগোষ্ঠীর ৬০% এর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করে এবং প্রায় ১২% শ্রমশক্তিকে কর্মসংস্থান প্রদান করে। এছাড়াও, এই খাত থেকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন ও প্রিমিয়াম মূল্য নিশ্চিত করতে তৃতীয় পক্ষের সার্টিফিকেশন (টিপিসি) অপরিহার্য। এই প্রেক্ষাপটে, এআইপি এবং টিপিসি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল স্তরের স্টেকহোল্ডারদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালার মূল আলোচ্য বিষয়
কর্মশালায় জলজ পালন খাতের আধুনিকীকরণ, উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি উন্নয়ন এবং টিসিপি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বিশেষভাবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়:
মৎস্যচাষ উন্নয়ন কর্মসূচি (এআইপি): মৎস্যচাষ খাতের উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিকীকরণ, পরিবেশবান্ধব অনুশীলন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে টিসিপি অর্জনের পথ সুগম করা।

টেকসই তৃতীয় পক্ষের সার্টিফিকেশন (টিপিসি): আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য বিএপি, এএসসি, এবং গ্লোবালজি.এ.পি.-এর মতো স্বীকৃত সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামগুলোর প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা।
রপ্তানি সম্ভাবনা: বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যচাষ পণ্য, বিশেষ করে চিংড়ির রপ্তানি বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের সুযোগ।
কর্মশালায় অংশগ্রহণ ও বক্তব্য
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ আনোয়ার হোসাইন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বিজিনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। তিনি তার বক্তব্যে মৎস্যচাষ খাতের আধুনিকীকরণ ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এআইপি ও টিপিসি বাস্তবায়নে সকল স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন:
ড. শফিকুর রহমান, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএফআরআই, কক্সবাজার।
মোঃ লুতফুর রহমান কাজল (সাবেক সংসদ সদস্য), সভাপতি, শাব, কক্সবাজার।
মোঃ শাইফুদ্দিন শাহীন, সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ, কক্সবাজার।
মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, ডেপুটি কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কক্সবাজার।
ড. জিএম খুরশেদ আলম, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই ও সাবেক সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট, বিশ্বব্যাংক।
কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মাহমুদুল হক, চেয়ারম্যান, বিএসএফএফ এবং কর্মশালার সঞ্চালক। তিনি তার সমাপনী বক্তব্যে মৎস্যচাষ খাতের উন্নয়নে এআইপি ও টিপিসির ভূমিকা তুলে ধরেন এবং সকল অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের আহ্বান জানান।
স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ ও মতামত
কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, মৎস্য চাষী, প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিনিধি, রপ্তানিকারক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জ ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করেনঃ
ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের চ্যালেঞ্জ: উৎপাদন পরিমাণ কম, প্রযুক্তির অভাব, রোগবালাই এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
টিপিসি অর্জনের পথ: ক্ষুদ্র চাষীদের ক্লাস্টারে সংগঠিত করা, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা।
রপ্তানি বৃদ্ধির কৌশল: আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ, ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণ।
আগামী পদক্ষেপ
কর্মশালায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলোর উপর জোর দেওয়া হয়:
এআইপি বাস্তবায়ন: মৎস্যচাষ খাতের আধুনিকীকরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এআইপি কার্যক্রম জোরদার করা।
টিপিসি অর্জনের প্রস্তুতি: ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য গ্রুপ সার্টিফিকেশন, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান।
স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা: সরকার, বেসরকারি সংস্থা, প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে সমন্বয় বৃদ্ধি।
রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ: নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা।
এই কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশের মৎস্যচাষ খাতের রপ্তানি সম্ভাবনা, টিপিসির গুরুত্ব এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে কর্মশালায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।