মঙ্গলবার, জুলাই ২৯

মায়ের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে শিল্পকর্ম বিক্রির সিদ্ধান্ত রাবি শিক্ষার্থীর

|| শাকিবুল হাসান | রাবি প্রতিনিধি ||

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী তারিফ হাসান মেহেদী মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে নিজের তৈরি শিল্পকর্ম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসব শিল্পকর্ম তিনি দীর্ঘদিনের পরিশ্রম দিয়ে তৈরি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান এবং সহানুভূতিশীল মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন।

তারিফের মা, জাহানারা বেগম (৫৫), ২০১৪ সাল থেকে অসুস্থ। ২০২২ সালে তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে বাকশক্তি ও চলাফেরার ক্ষমতা হারান। বিছানায় শায়িত সেই মা এবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তাঁর হার্টের ৪৩ শতাংশ ব্লক রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন।

তারিফ হাসান মেহেদী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর পরিবার নেত্রকোনা জেলার ইসলামপুর গ্রামে বাস করে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। গতবছরের জুলাই মাসে তাঁর বাবা বকুল মিয়া ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর বড় ভাই শাহিন মিয়াও হৃদ্‌রোগে মারা যান। পরিবারে উপার্জনের একমাত্র উৎস হারিয়ে তারা এখন চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। বাবার চিকিৎসায় প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। এখনও ৩৮ হাজারের মতো টাকা ঋণ রয়েছে। এখন আবার মায়ের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। চিকিৎসা খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে নিজের তৈরি শিল্পকর্ম বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ফেসবুকে নিজের তৈরি করা কয়েকটি শিল্পকর্মএর ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আজ সকল লজ্জা, ইতস্ততা ভাংলাম। সারাজীবন মানুষের উপকার করে আজ নিজের উপকারের জন্য আপনাদের কাছে হাত পেতে অনুরোধ করছি আমার আম্মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।’

সকলের কাছে সাহায্যের আবেদন করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আম্মা আবার হার্ট স্ট্রোক করেছেন। জানিনা আল্লাহ একটা মানুষকে এভাবে কেন কষ্ট দিচ্ছেন। এখন দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করানো দরকার যার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। ২০১৬ থেকে আম্মার মেডিসিন অন্যান্য মেডিকেল টেস্ট বাবদ ঋণ লাখ টাকার উপরে। আমার অবস্থা মুমূর্ষ। আমার আম্মাকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন।’

শিল্পকর্ম বিক্রির ঘোষণা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা আমার এই শিল্পকর্মগুলো কিনে আমার পাশে থাকুন, আমাকে সহযোগিতা করুন। নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে কিনতে চাইলতেও কিনুন। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলবো পোস্টটি শেয়ার করে মানবিক মানুষদের কাছে পৌঁছে দিন।’

পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, অনেকেই বলছেন শিল্পকর্ম কেনার সামর্থ্য নেই কিন্তু পাশে থাকতে চাচ্ছেন, অনেকেই কল ইনবক্স করে বিভিন্ন একাউন্ট যুক্ত করতে বলেছেন। আমি লজ্জা বিসর্জন দিয়ে সেটা যুক্ত করলাম।তবুও অনুরোধ করবো আমার শিল্পকর্মগুলো কিনুন ।প্রয়োজনে: নগদ/বিকাশ (01765892355) রকেট : (01726359230-4)।

এ বিষয়ে তারিফ হাসান মেহেদী বলেন, ‘শিল্পকর্ম আমার সন্তানের মতো। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে এগুলো তৈরি করা। আমার কখনোই পরিশ্রমের ফল বিক্রি করার চিন্তা আসেনি। আসলে শিল্পকর্মের কোনো মূল্য হয়না। তবে এখন আমার মায়ের অবস্থা গুরুতর। তাই এখন আমার মাকে বাচাঁতে শিল্পকর্মগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই শিল্পকর্মগুলো বিক্রি করে আমার মায়ের চিকিৎসা শুরু কতে চাই। আমি চাই সবাই আমার শিল্পকর্মগুলো কিনে আমাকে সাহায্য করুক। তবে চাইলে কেউ অন্যভাবেও সাহায্য করতে পারবেন। আমার মাকে বাচাতে এগিয়ে আসার আহ্বান সকলের কাছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *