
|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||
বৈষম্যবিহীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২৫ দ্রুত প্রণয়নের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ফোরাম। আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) শিক্ষক ফোরামটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রিয় শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী বন্ধুগণ, বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষকগণের ন্যায্য অধিকার ও দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দাবিসমূহের বাস্তবায়নের জন্য আমরা সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গত ১২ বছর ধরে ইবতেদায়ি শিক্ষক, মৌলভী ও ক্বারি শিক্ষকগণের প্রতি একটি প্রশাসনিক বৈষম্য বজায় রয়েছে, যা শিক্ষাক্ষেত্রে গভীর অসমতা ও বঞ্চনার সৃষ্টি করেছে।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তারা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তুলছেন। অথচ একই পদমর্যাদা ও দায়িত্ব পালন করেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তুলনায় তিন ধাপ নিচের গ্রেডে চাকরি করছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকগণ। একই দেশে একই স্তরে দুই শিক্ষা ধারার মধ্যে সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য আকাশ -পাতাল। এইভাবে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন বছরের পর বছর, যা স্পষ্ট বৈষম্যের দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশ সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ফোরাম সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে—
১. ইবতেদায়ি শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা ফাজিল (ডিগ্রি)/স্নাতক/সমমান নির্ধারণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় সমান গ্রেড ও মর্যাদা প্রদান করতে হবে।
২. মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকদেরকে স্কুল শিক্ষকদের মতো ৮ম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।
৩. আলিম মাদ্রাসার আরবি প্রভাষকদের প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির পদে আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।
৪. অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের জন্য প্রত্যেক বিভাগের জন্য ৭জন/প্রয়োজন সংখ্যক শিক্ষক পদ সৃজন করা এবং সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃজন করা।
৫. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫০% অনুপাত প্রথা বাতিল করা/গবেষণার মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান করা।
৬. সংযুক্ত ইবতেদায়ী স্তরকে পৃথক করা। (শুধু ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রাক-ইবতেদায়ী থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত করা)
৭. সংযুক্ত দাখিল মাদ্রাসা থেকে আলিম, ফাযিল ও কামিল স্তরকে পৃথক করা।( শুধু জুনিয়র দাখিল (৬ষ্ঠ -৮ম/ ৬ষ্ঠ- ১০ম)
১.শুধু আলিম মাদ্রাসা(১১-১২)
২.আলিম থেকে ফাযিল (১১-১৫)
৩.আলিম থেকে কামিল(১১-১৭)
৮. সহকারী সুপার ও উপাধ্যক্ষদের পৃথক বেতন কোড প্রদান করা।
৯. প্রভাষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) পদে ফাযিল ও কামিল ডিগ্রির পাশাপাশি আরবি, কুরআন, হাদিস, দাওয়াহ ও ফিকাহ্ বিভাগকে সুযোগ প্রদান করা।
১০. প্রশাসনিক পদের জন্য বিএড /বিএমএড কোর্স বাধ্যতামূলক করা।
১১. গবেষক (এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী) কে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা।
১২. ইবতেদায়ী ক্বারী ও দাখিল ক্বারী পদের জন্য দাখিল মুজাব্বিদ অথবা আলিম মুজাব্বিদ মাহির অথবা দাওরায়ে হাদিস ও হাফেজে কুরআন অথবা ইলমুল কিরায়াতে একবছরে ডিপ্লোমাধারীদেরকে সুযোগ দেওয়া।
ফোরামের নেতারা জানান, এই প্রস্তাবনাসমূহ ইতোমধ্যেই বৈষম্যবিহীন বেসরকারি জনবল কাঠামো ও মাদ্রাসা নীতিমালা ২০২৫-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, কিন্তু এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।
বাংলাদেশ সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহিন সিকদার বলেন,
“আমরা বিশ্বাস করি—শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য নয়, সমতা ও ন্যায্য স্বীকৃতিই একটি শিক্ষাবান্ধব রাষ্ট্রের ভিত্তি। আগামী ২০ নভেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে যদি ইবতেদায়ি শিক্ষকদের যোগ্যতা ফাজিল/স্নাতক/সমমান নির্ধারণ ও বৈষম্যবিহীন নীতিমালা প্রকাশ না করা হয়—তবে আমরা ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।”
তিনি আরও জানান, দেশের প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার শিক্ষকদের এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংগঠনের অঙ্গীকার
ফোরাম জানায়—
“আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমাদের একটাই অঙ্গীকার—
‘বৈষম্যবিহীন নীতিমালা চাই’।”
আরো উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা।
