
নাগেশ্বরীতে প্রশাসনের অনুষ্ঠানে আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে তীব্র রাজনৈতিক উত্তাপ
|| কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ||
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণিল আয়োজন হলেও, অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জা ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও রাজনৈতিক ক্ষোভ। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে একই সারিতে বসতে দেখা গেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের একাধিক শীর্ষ নেতাকে—যা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে উপস্থিত ছিলেন— কুড়িগ্রাম জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও নৌকা প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সদস্য মো: মজিবর রহমান বিরবল, নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ: হাকিম মাস্টার, কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের সাবেক এপিপি ও আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সোলায়মান আলী, এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: রবিউল ইসলাম খান (রবি)-সহ আরও একাধিক আওয়ামীপন্থি নেতাকর্মী।

এই দৃশ্য দেখে তাৎক্ষণিকভাবে মঞ্চ ত্যাগ করেন নাগেশ্বরী পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: শহিদুল ইসলাম সরকার, উপজেলা বিএনপির সদস্য মো: মাহফুজার রহমান সিদ্দিকী, মো: জাহিদুল ইসলাম খানসহ একাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরপরই উপজেলা জুড়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক গুঞ্জন ও সমালোচনা।
নাগেশ্বরী পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, “৫ আগস্টের আগে যেখানে আমাদের আমন্ত্রণই জানানো হতো না, সেখানে জুলাই–আগস্ট বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা কীভাবে বিজয় দিবসের মঞ্চে প্রশাসনের সঙ্গে একই সারিতে বসেন? তাদের অনেকেই বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।”
তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু রাজনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন নয়, এটি শহীদদের আত্মত্যাগ এবং গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।”
উপজেলা বিএনপির সদস্য মো: মাহফুজার রহমান সিদ্দিকী বলেন, “আমরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম সারিতে পতিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতাদের বসে থাকতে দেখি, আমাদের বসার জায়গা ফাকা নেই। বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করি। এটি দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।”
তার ভাষায়, “নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসন জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষিদ্ধদের সঙ্গে কাতারবদ্ধ হয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করেছে।”
এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন জাহান লুনা বলেন,
“আমি সদ্য এই উপজেলায় যোগদান করেছি। এখনো কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তারা আমন্ত্রিতও ছিলেন না।”
সদ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন করা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)র সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আব্দুল্লা হিল জামান মুঠোফোনে জানান,
“আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই।”
ঘটনার পর থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয়দের প্রশ্ন— নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলের নেতারা কীভাবে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে একই সারিতে জায়গা পান? এটি প্রশাসনিক অসতর্কতা, না কি রাজনৈতিক বার্তা?
বিজয় দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন অনুষ্ঠানে এমন বিতর্কিত উপস্থিতি প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও তদন্তের দাবি উঠেছে স্থানীয় রাজনীতিতে।
