বুধবার, জুন ১৮

ফুলবাড়ীতে গরুর ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ’-এ আতঙ্কে খামারি

|| জাকারিয়া শেখ | ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। দিন যত যাচ্ছে, বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত গবাদিপশুর সংখ্যা। এতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফুলবাড়ী উপজেলায় বর্তমানে খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের মালিকানাধীন প্রায় ৬৭ হাজার গরু রয়েছে। এসব গরুর মধ্যে অসংখ্য গরু ইতোমধ্যে এলএসডি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন গড়ে ৪-৫টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হচ্ছে। তবে, ঠিক কত সংখ্যক গরু আক্রান্ত এবং কতটি গরু মারা গেছে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাদুর্ভাবটি এবারে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ। রোগাক্রান্ত গরুদের দেহে ফোস্কা, মুখে ঘা, পা ফোলা ও জ্বর দেখা দিচ্ছে। একবার আক্রান্ত হলে অনেক সময়েই চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে না গরু। অনেক কৃষক চিকিৎসা করাতে গিয়ে অর্থকষ্টে ভুগছেন।
চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষাণী হাছনা বেগম জানান, “আমার চারটি গরুর একটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে ফোস্কা দেখে প্রথমে এলার্জি ভেবেছিলাম। পরে মুখে ঘা, পা ফুলে গেলে স্থানীয় একজন চিকিৎসককে ডাকলে তিনি জানান এটা ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ। চিকিৎসা করাতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গরুটি মারা যায়। এখন বাকি তিনটি গরু নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক কৃষক পশু হাসপাতালের পরিবর্তে স্থানীয় কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এতে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় পশুর মৃত্যুহার বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএসডি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত মশা, মাছি ও অন্যান্য রক্তচোষা কীটপতঙ্গের মাধ্যমে গরুর শরীরে ছড়ায়। এটি সরাসরি সংক্রমণ না হলেও একটি এলাকায় একবার প্রবেশ করলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান কনক বলেন, “এ রোগে আক্রান্ত গরুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকেই দেরি করে থাকেন বা ভুল চিকিৎসা করান। এতে রোগ আরও ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যু ঘটে। আমরা মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে খামারি ও কৃষকদের সচেতন করছি। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, প্রান্তিক কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানো এবং পশুর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রাণিসম্পদ টিম কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *