
|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক ||
দীর্ঘ দুই বছর পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পালিত হলো যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন বা বড়দিন। তবে এই উদযাপন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে একেবারেই আলাদা। নেই কোনো জাঁকজমকপূর্ণ আলোকসজ্জা, নেই গির্জার সুউচ্চ মিনারে ঘণ্টার সেই পরিচিত ধ্বনি। চারদিকে ইসরায়েলি হামলার ক্ষত আর ধ্বংসস্তূপের মাঝেও গাজার খ্রিস্টান সম্প্রদায় দিনটিকে পালন করেছে এক অনন্য অদম্য শক্তিতে।
গত বছর যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে কোনো উৎসব পালন করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর দিনটি ছিল মূলত শোক, টিকে থাকা এবং হার না মানার এক সম্মিলিত বহিঃপ্রকাশ। গাজার প্রাচীন গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের ভেতর যখন মোমবাতিগুলো জ্বলে উঠছিল, তখন সেখানে সমবেত হওয়া মানুষদের চোখে উৎসবের আনন্দের চেয়ে বেশি ছিল প্রিয়জন হারানোর বেদনা আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। চার্চের ছাদ থেকে খসে পড়া চুনকাম আর দেয়ালে গোলার আঘাতের চিহ্নগুলো যেন গাজার বর্তমান বাস্তবতারই সাক্ষী দিচ্ছে।
এবারের বড়দিনে কোনো নতুন পোশাক কেনা হয়নি, সাজানো হয়নি রঙিন ক্রিসমাস ট্রি। জরাজীর্ণ পোশাকেই মানুষ একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন, সান্ত্বনা দিয়েছেন। প্রার্থনা সভায় উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, “আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু আমাদের টিকে থাকার ইচ্ছা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এই দিনটি আমাদের কাছে কেবল একটি উৎসব নয়, বরং এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের একটি অংশ।”
গাজার এই ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য বড়দিন এখন আর কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি হয়ে উঠেছে টিকে থাকার এবং আশার প্রতীক। ধ্বংসস্তূপের মাঝে জ্বালানো প্রতিটি মোমবাতি যেন বিশ্বকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, অন্ধকারের তীব্রতা যত বেশিই হোক না কেন, জীবনের আলো সেখানে এখনো অম্লান।
সূত্র: আল জাজিরা
