
|| অধ্যাপক ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী | ইবি, কুষ্টিয়া ||
বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। এদেশের জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মুসলিমদের কৃষ্টি কালচারের প্রতিফলন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক।
দেশের প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সকল স্তরের নির্বাহীগণের কি যোগ্যতা থাকতে হবে, বিষয়টি এখন বিরাট প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রশ্নটির উত্থাপন ও স্বাভাবিক নয়, বর্তমানে এটা খুবই স্বাভাবিক।
বর্তমান সরকার নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখানে দলীয় কারো ভেড়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। যখন দলীয় সরকার ছিল তখন একটি দল রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। অনুরূপভাবে সামনে কোন নির্বাচিত দলীয় সরকার গঠন হলে সেখানেও সেই দলীয় সরকার রাষ্ট্র চালাবেন, সেখানে দলীয় লোকজন নির্বাহী পদে বসবেন সেটা স্বাভাবিক এবং জনগণ সেটা মেনে নিবে।
কিন্তু বর্তমানে অন্তর্বর্তী নির্দলীয় সরকারের অধীনে দেশের সর্বোচ্চ উপদেষ্টা পরিষদে দেশের কোন ধরনের নাগরিক স্থান পাবে সে বিষয়টি দেশের জ্ঞানীগুণী, খ্যাতিমান, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদগণ সরকারকে সুপরামর্শ দিবেন এবং সে সরকার তাদের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের জনগণের অধিকাংশের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দান করবে।
১. আমার দৃষ্টিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে এমএ পাস হবেন।
২. একজন মুসলমান হিসেবে (ভিন্ন ধর্মের হলে) তার ধর্মের প্রতি অনুরাগ বাস্তব জীবনে ধর্মের প্রতিফলন থাকতে হবে।
৩. তার কর্মজীবনে ধর্মবিরোধী রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজে অংশগ্রহণকারী হতে পারবে না।
৪. অধিকাংশ জনগণের পক্ষে বা বিপক্ষে তার কি ভূমিকা ছিল সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে।
৫. স্বাধীনতার পক্ষে বা বিপক্ষে তার অবস্থান কি ছিল?
৬. পেশা জীবনে তিনি স্বপেশার প্রতি কতটুকু দায়িত্বশীল ছিলেন?
৭. পেশার জীবনে অর্থনৈতিক বিষয়ে তিনি কতটুকু স্বচ্ছ ছিলেন?
৮. দেশ জাতির উন্নয়নে তার কতটুকু ভূমিকা ছিল?
৯. কর্মজীবনে তার লেখায় প্রবন্ধে সাহিত্যে কাব্যে কাজে দেশ প্রেমের কোন উদাহরণ আছে কি না?
১০. রাজনৈতিক ব্যক্তি হলেও দলীয় সরকারের কার্যকালে তার অবস্থান কি ছিল?
সরকারের যেসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে তাদেরকে এ দায়িত্বটি দিলে একদিনের মধ্যেই তার চৌদ্দগুষ্ঠীর সকল তথ্য বের করে আনতে পারবেন।
বর্তমান সরকার সুষ্ঠু সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনার জন্য সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে আরও পাঁচ জনকে সংযুক্ত করেছে। তন্মধ্যে দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপকভাবে তাদের বিষয়ে নেতিবাচক কথা চাউর হয়েছে। বিশেষত একজন চলচ্চিত্রকারকে নিয়ে আরো বেশি চাউর হয়েছে।
গত স্বৈরসরকারের আমলে কয়েকজন চলচ্চিত্রকার আমাদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেটা ছিল একটি দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকার যাকে ইচ্ছা মনোনয়ন দিয়েছে তাতে সাধারণ জনগণের তেমন কিছু বলার ছিল না।
কিন্তু বর্তমান নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখানে তো দেশ জাতির ইচ্ছা এবং ধর্ম ইত্যাদির প্রতিফলন অবশ্যই থাকতে হবে একজন উপদেষ্টার মধ্যে। এটাতো কোন দলীয় সরকার নয় যে কাউকে খুশি করার জন্য যাকে তাকে নিয়োগ দিতে হবে।
ফেসবুক সূত্রে জানা যায়, স্বৈরসরকারের দোসরদের অন্যতম ছিলেন চলচ্চিত্রকার সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টা এবং তার স্ত্রীও। যার প্রমাণ একাধিক নাটক চলচ্চিত্রে স্পষ্ট তো দেখা যাচ্ছে। তাহলে তিনি কিভাবে নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা পদে কার পরামর্শে নিয়োগ পায়, সেটা দেশ জাতির কাছে প্রশ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়টি আমার মতো অনেককেই আহত করেছে। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ দেওয়ার মতো দেশের কি যোগ্য লোকের এত অভাব পড়েছে যে এ ধরনের একজন দেশ জাতি ইসলামের প্রতি নেতিবাচক ভাবাপণ্য স্বৈরশাসকের দোসরকে নিয়োগ দিতে হবে?
অতিসত্বর আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী অভিযুক্তদের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দেশ জাতির অভিপ্রায় ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করতে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
লেখক: সাবেক ডিন, থিওলজী এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।