মঙ্গলবার, জুলাই ২৯

তাওবাকারীর মর্যাদা অপরিসীম

ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য তওবা (আল্লাহর নিকট ফিরে আসা) গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যক। মানুষ স্বভাবগতভাবেই ভুল করে, গুনাহে লিপ্ত হয়, কিন্তু ইসলাম আল্লাহর অসীম রহমতের দরজা খোলা রেখেছে তাদের জন্য, যারা গুনাহ থেকে ফিরে এসে আন্তরিকভাবে তওবা করে। কুরআন ও হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি তওবা করে, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অপরিসীম।

আল্লাহ তা’আলা কুরআনে তওবাকারীদের প্রতি অসীম রহমত ও ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২)

এখানে আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি তওবাকারীদের ভালোবাসেন। এটি তওবার মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধির একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ।

“আর যারা মন্দ কাজ করেছে, অতঃপর তাওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক এর পরে অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আল আ’রাফ, আয়াত: ১৫৩)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, গুনাহের পর যদি কেউ তওবা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন এবং তাঁর উপর দয়া বর্ষণ করেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তওবার গুরুত্বের উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদীসে তওবাকারীর মর্যাদা এবং তাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ রয়েছে।

“তওবাকারী ব্যক্তি সেই ব্যক্তির মতো, যে কখনো গুনাহই করেনি।” (ইবনে মাজাহ: ৪২৫০)

এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন, তওবাকারী ব্যক্তি এমন অবস্থায় পৌঁছায়, যেন সে কোনো গুনাহই করেনি। আল্লাহ তাকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা করে দেন।

“প্রত্যেক আদম সন্তান পাপী, আর পাপীদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো তারা, যারা তওবা করে।” (তিরমিযি: ২৪৯৯)

এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষকে তওবার পথে ফিরে আসতে উৎসাহিত করেছেন এবং তওবাকারীদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেছেন।

তওবার শর্তাবলী:
তওবা শুধুমাত্র মুখের কথা নয়, বরং এটি হতে হবে আন্তরিক। তওবার কিছু শর্ত রয়েছে:

১. পাপের জন্য আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
২. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৩. আবার সেই পাপে ফিরে না যাওয়ার সংকল্প করা।
৪. যদি গুনাহটি অন্যের সাথে সম্পর্কিত হয়, তবে তার সাথে সালিশ করা।

তওবা একটি মহান ইবাদত এবং ইসলামে এর গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। আল্লাহর নিকট তওবাকারীর মর্যাদা অপরিসীম। তওবার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে তাঁর রহমত এবং জান্নাতের পথে পরিচালিত করেন। যারা তওবা করে, তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। কুরআন ও হাদীসের আলোকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, তওবাকারী ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করে।

আল্লাহ আমাদেরকে গুনাহ থেকে তওবা করার তৌফিক দিন এবং আমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *