
|| রাসেল আহমদ | ঢাকা আলিয়া প্রতিনিধি ||
সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা-তে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আবাসিক সিট সংকট ও নতুন হল নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় কাশগরী হল মাঠ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানে তাদের জোরালো দাবি জানান:
জমি আছে হল নাই- এমন কোন ক্যাম্পাস নাই
হল চাই হল দে- নইলে গদি ছাইড়া দে
আবাসিক হলে সিট চাই -এটা আমাদের অধিকার
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ঢাকা আলিয়ার শিবির সভাপতি আব্দুল আলিম বলেন, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার শিক্ষার্থীরা আজ চরম অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। শত বছরের পুরোনো এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকার ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের একমাত্র খেলার মাঠ দখল করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলার নামে আদালত বসানো হয়েছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার এই মাঠকে একের পর এক মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার বিচারস্থল বানিয়ে ফেলেছে।

একদিকে ছাত্ররা হলে জায়গা না পেয়ে মেসে, মসজিদে রাত কাটায়, অন্যদিকে আমাদের মাঠ দখল করে চলছে তথাকথিত বিচার। এটা কোনো স্বাভাবিক অবস্থা নয়, এটা একটা রাষ্ট্রীয় পরিকল্পিত আগ্রাসন। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ছাত্রসমাজের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ঢাকা আলিয়ার জমি ছাত্রদের, বিচারালয়ের নয়। আমরা এই দখলদারিত্ব মেনে নেব না। নতুন হল নির্মাণ না হলে, দখলদার কারা অধিদপ্তর না সরালে, ছাত্ররা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে পড়লে ইতিহাস থেমে যায় না, বরং আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
কামিল বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আবাসন সংকট এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। যেখানে সিট আছে মাত্র ৩০০ জনের জন্য, সেখানে পড়ছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। অধিকাংশই এসেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। মেসে থাকা, অতিরিক্ত ভাড়া গুনা, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে জীবন চালানো এই হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ প্রশাসনের নিরবতা যেন এই সংকটকে স্বাভাবিক করে তুলেছে।
শিক্ষার্থীটি বলেন, ক্যাম্পাসে জমি আছে, তবু নতুন হল হচ্ছে না। কারা অধিদপ্তর আমাদের জায়গা দখল করে রেখেছে বছরের পর বছর। এটা কি ছাত্রদের প্রতি রাষ্ট্রের অন্যায্য আচরণ নয়? আমরা কোনো বিলাসিতা চাই না, আমরা কেবল ন্যায্য আবাসন চাই, যাতে একজন শিক্ষার্থী মাথা গুঁজে অন্তত পড়াশোনা করতে পারে।
এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি একাডেমিক ভবন বা আবাসিক হলও নির্মাণ হয়নি আমরা নতুন একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হল চাই। শিক্ষার সুযোগ চেয়ে আমরা এসেছি, অথচ আজ আমরা দেখছি এই শহরে আমাদের ঠাঁই নেই। প্রশাসন যদি চায় আমরা মাদ্রাসা ছেড়ে রাস্তায় থাকি, তাহলে আমাদের আন্দোলনও হবে রাস্তাকেন্দ্রিক।
তিনি আরও বলেন, জায়গা থাকতে আমরা আশ্রয়হীন! মাঠ আছে, তবু খেলা যায় না, ক্যাম্পাসে বসবাসের মতো আবাসন নেই। নতুন হলের জন্য জায়গা আছে অথছ হল নির্মানের ইচ্ছা নেই। প্রশাসন চুপ, সরকার নীরব এই অবহেলার শেষ কোথায় ?
ছাত্রদের কণ্ঠরোধ করা যায় না। আমাদের অধিকার আমরা আদায় করবো। মাঠ ফেরত চাই, নতুন হল চাই এটাই শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত বার্তা।
আবাসন সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওবায়দুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের লিখিত দাবি আমি পেয়েছি। আমি সচিব মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করবো এবং সমস্যার সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করবো।