বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫

খুলনার মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠ মেলার জন্য ভাড়া; ক্ষুব্ধ ক্রীড়া সংগঠকরা

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

খুলনা মহানগরীর নারীদের একমাত্র খেলাধুলার মাঠ—সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের পাশে অবস্থিত বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠ—আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক মেলার কারণে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাংলাদেশ উইভার্স প্রোডাক্টস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনকে ৯ লাখ টাকায় মাঠটি ভাড়া দিয়েছে। প্রস্তুতি ও পরবর্তী নির্মাণসামগ্রী সরাতে আরও প্রায় এক মাস সময় লাগবে বলে মাঠটি কমপক্ষে দুই মাস খেলাধুলার বাইরে থাকবে।

এদিকে মাঠে চলছে আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট, এবং ২০ ডিসেম্বর থেকে আন্তঃজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার কথা। শিশুদের অ্যাথলেট ক্যাম্প, ফুটবল ক্যাম্পসহ বিভিন্ন পরিকল্পনাও ছিল। মাঠ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব আয়োজনই এখন অনিশ্চিত। জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা আলীম-উজ-জামান জানান, মাঠ ভাড়া দেওয়ায় বিকল্প ভেন্যু খুঁজতে হচ্ছে। জমজমাট খেলাধুলার পরিবেশে নষ্টে এরই মধ্যেই ক্রীড়া সংগঠকদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

খুলনায় নারীদের খেলাধুলার জন্য পৃথক আর কোনো মাঠ নেই। তাই এই মাঠটি ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক দপ্তর সম্পাদক সিলভী হারুন। তিনি বলেন, খুলনায় মেয়েদের খেলার জন্য নিরাপদ জায়গা নেই। এই মাঠ ভাড়া দেওয়া হলে তাদের শেষ সুযোগটিও নষ্ট হবে। বিশিষ্ট নারী সংগঠক সৈয়দা রেহেনা ঈসা বলেন, নারীদের খেলাধুলা, সাঁতার ও কর্মমুখী শিক্ষার একমাত্র স্থান এটি। কার স্বার্থে এই মাঠ ভাড়া দেওয়া হলো—তা খতিয়ে দেখা জরুরি। তিনি অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।

ক্রীড়া সংগঠকদের অভিযোগ, মাঠে মেলা মানেই লক্ষ লক্ষ টাকার হাতবদল। রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা, ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা এবং সুবিধাভোগী ক্রীড়া সংগঠকরা অনৈতিক আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি শিশু-কিশোরদের খেলার মৌসুম। এই সময়ে মাঠ বন্ধ করে দিলে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হবে মেয়েরা।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক আওলাদ হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু তার জানা নেই। জেলা প্রশাসকের সুপারিশের ভিত্তিতেই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খেলার মাঠে সব ধরনের মেলা বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। রাজনৈতিক নেতা, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারসহ সবাই এই আয়োজন বন্ধে একমত ছিলেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটি গোষ্ঠী আবারও মাঠ দখলের উদ্যোগ নিয়েছে। যে কোনো মূল্যে এই মেলা বন্ধ করা হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

সম্প্রতি গাজীপুরের শিমুলতলীতে একই ব্যক্তি মেলার আয়োজন করেছিলেন। অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা সেই মেলা ভেঙে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

মেয়েদের খেলাধুলার একমাত্র মাঠে এই সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা। এখন দৃষ্টি একটাই—এই মেলা বন্ধ হবে, নাকি মাঠ হারাবে খুলনার মেয়েরা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *