বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫

খুলনায় ভাড়া বাসায় গৃহবধূ খুন, পলাতক ছেলেকে খুঁজছে পুলিশ

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

খুলনা নগরীর ট্যাংক রোডের একটি ভাড়া বাসা থেকে শিউলী বেগম (৪৫) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১০ ডিসেম্বর (বুধবার) রাত পৌনে ১২টার দিকে বাহির থেকে তালাবদ্ধ ঘর ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই শিউলীর একমাত্র ছেলে রিয়াদকে পাওয়া যাচ্ছে না—যা হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রহস্য আরও গভীর করেছে।

পুলিশ ও সিআইডির তদন্তদল রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আলামত সংগ্রহ করে। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, শিউলী বেগমকে মাথায় ‘পুতো’ (মশলা পেশার সরঞ্জাম) জাতীয় কোনো ভোঁতা বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়, পরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালানো হতে পারে। তবে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে সময় লাগবে বলে জানায় তদন্ত সংস্থা।

ওসি তদন্ত শাহাজাহান আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, “ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। ভেতরে বিছানায় শিউলীর মরদেহ পাওয়া গেছে। তার ছেলে রিয়াদকে পাওয়া যাচ্ছে না। সিআইডিকে ঘটনাস্থলে তলব করা হয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পরিস্থিতি শুরু থেকেই সন্দেহজনক মনে হয়েছে। গৃহবধূর মৃত্যু কীভাবে ঘটেছে তা তারা বুঝতে পারেননি। তবে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ ধারণা করছেন—রিয়াদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

তদন্তে জানা গেছে, শিউলী বেগম সৌদি আরব থেকে ফেরার দশ দিন পর ট্যাংক রোডের দুই কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটি ভাড়া নেন। এক কক্ষে থাকতেন তিনি ও তার দ্বিতীয় স্বামী মো. সাগর; অন্য কক্ষে মেঝেতে থাকতেন ছেলে রিয়াদ, যিনি পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। শিউলী বেগম তাকে কষ্টের কাজ থেকে সরিয়ে দিতে স্থানীয় বাজারে একটি দোকানও করে দেন।

মৃত্যুর ৫–৬ দিন আগে শিউলী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাড়িতে আনেন, এ তথ্য পরিবারের সবারই জানা ছিল। ঘটনার পর সেই টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তার বড় মেয়ে কেয়া। তিনি সরাসরি ভাই রিয়াদের বিরুদ্ধে মাকে হত্যার অভিযোগ তোলেন।

বুধবার ভোরে রিয়াদ গেটের বাইরে তালা দিয়ে বাসা থেকে বের হন। এরপর সারাদিন শিউলীর ফোন বন্ধ পাওয়া গেলে স্বামী সাগর ও মেয়ে কেয়ার মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। সন্ধ্যার পর কেয়া বাসায় এসে চিৎকার করেও মায়ের সাড়া না পেয়ে নানা বাড়ি যান—কিন্তু সেখানেও তাকে পাওয়া যায় না। পরে বাড়ি ফিরে গেটের সামনে মায়ের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। বাড়ির মালিকের সহায়তায় পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয় তার লাশ।

খুলনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শিহাব করীম বলেন, “ঘটনাটি রহস্যজনক। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা রিয়াদকে খুঁজছি, তাকে পেলে অনেক কিছু জানা যাবে”

থানা সূত্রে জানা গেছে- এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং পলাতক রিয়াদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *