রবিবার, ডিসেম্বর ৭

ইউক্রেনে ফের রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলা, শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি নেই

|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক ||

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হওয়ার মধ্যেই ইউক্রেনে আবারও বড় আকারের বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের ওপর মস্কোর চালানো সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিন দিনের আলোচনা শনিবার কোনো গঠনমূলক অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে তার ফোনালাপ ‘গঠনমূলক’ ছিল। তবে উভয় পক্ষই স্বীকার করেছে যে, যেকোনো ধরনের কার্যকর অগ্রগতি নির্ভর করছে মস্কো সত্যিকারের শান্তির পথে এগোতে রাজি কি না, তার ওপর।

এই অচলাবস্থা আবারও প্রমাণ করল যে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে একটি বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। কারণ, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী টানা অগ্রসর হচ্ছে।

অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া হামলায় রাশিয়া মোট ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এসব হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তের জ্বালানি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। হামলায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লিমেনকো নিশ্চিত করেছেন, ২৯টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই হামলার ফলে সাময়িকভাবে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যা পারমাণবিক চুল্লিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, রুশ দখলে থাকা এই স্থাপনার ছয়টি বন্ধ চুল্লিকে ঠান্ডা রাখতে এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ঠেকাতে অবিরাম বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, “জ্বালানি স্থাপনাগুলোই ছিল (হামলার) প্রধান নিশানা।” তিনি আরও জানান, ড্রোন হামলায় রাজধানী কিয়েভের কাছে ফাস্তিভ শহরের একটি রেলস্টেশন ধ্বংস হয়েছে।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর তথ্যমতে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ৫৮৫টি ড্রোন ও ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা রাশিয়ার অনুকূলে

যুদ্ধক্ষেত্রের সাম্প্রতিক বাস্তবতা এখন রাশিয়ার অনুকূলে। এর মধ্যেই জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

  • রুশ বাহিনী ডোনেটস্কের পিকরোভস্ক শহরের খুব কাছে পৌঁছে গেছে।
  • পাশের শহর মিরনোহরাদকেও প্রায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে তারা।

শুধু নভেম্বর মাসেই রুশ সেনারা প্রায় ৫০৫ বর্গকিলোমিটার (১৯৫ বর্গমাইল) এলাকা দখল করেছেন, যা অক্টোবর মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। রাশিয়া এখন কার্যত পুরো লুহানস্ক অঞ্চলই নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। খেরসন পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকার বড় অংশও তাদের দখলে। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রে মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থা থাকলেও রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। সূত্র: আল-জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *