
|| মোঃ আরিফুল ইসলাম | নিজস্ব প্রতিনিধি (ঢাকা) ||
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার একাধিক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। ইসলামী ভাবধারা সংরক্ষণে সরকারের ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আরবি ভাষা প্রসারে নানামুখী কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আরবি ভাষাকে শুধু একটি ভাষা হিসেবে নয়, বরং কার্যকর দক্ষতা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখতে হবে। আরবি ভাষাকে ইকোনমিক টুলস হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস ২০২৫ এর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইমাম ও খতিবদের উদ্দেশে সচিব বলেন, মসজিদে খুতবার সময় আরবি অংশের বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করলে মুসল্লিরা উপকৃত হবেন এবং আরবি ভাষা শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে আলেম সমাজকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়িয়ে আরবি ভাষার গুরুত্ব সমাজের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি সমাজের বিশিষ্টজন ও উদ্যোক্তাদের টেলিভিশন ও রেডিওতে আরবি ভাষাভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচারে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক শরীয়াহ অ্যাডভাইজারি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবু বকর রফীক আহমদ বলেন, বিশ্বে অন্তত দুই বিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আরবি ভাষার সঙ্গে যুক্ত। অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে আরবি ভাষার তুলনা চলে না। পৃথিবীর সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত এই ভাষার চর্চা অব্যাহত থাকবে যা অন্য কোনো ভাষার ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। যদিও ইংরেজি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত, তবু আরবি হলো পবিত্র কোরআনের ভাষা; এ কারণেই এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অনন্য ও অতুলনীয়।
তিনি আরও বলেন, আরবি ভাষার গুরুত্ব শুধু মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইসলামকে সঠিকভাবে জানা, বোঝা এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থায় নিজেকে পরিচালিত করতে আরবি ভাষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শামছুল আলম বলেন, আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য আরবি ভাষা শিক্ষা অপরিহার্য। তিনি জানান, সৌদি সরকারের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে ‘ইসলামিক এরাবিক ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্তদের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যমুখী রেমিট্যান্স যোদ্ধারাও উপকৃত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে সেরা আরবি শিক্ষক নির্বাচনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশসেরা নয়জন শিক্ষক এবং আরবি বই পাঠ ও ভাষা দক্ষতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী আটজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আরবি ভাষা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু জাফর খান, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিয়া মোঃ নরুল হক, কামিল (স্নাতকোত্তর) শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ অলী উল্যাহ এবং রেজিস্ট্রার মোঃ আইউব হোসেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়।
