
|| ডা. আনোয়ার সাদাত ||
সাধারণত যে কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, জনগণের কল্যাণে তথা দেশের উন্নয়নের জন্য উপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা ও এসব নিয়ে আলাপ আলোচনা করা। অথচ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, জনকল্যাণকর কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা বা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার চেয়ে অনেকেই আজ পরনিন্দা ও অপরের সমালোচনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত।
কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ ত্রুটি বর্ণনা করাই হলো পরনিন্দা বা পরসমালোচনা। শরিয়তের পরিভাষায় এমন অনৈতিক চর্চাকে ‘গিবত’ বলা হয়। যার দোষ বর্ণনা করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে যদি সেই দোষ তার মধ্যে থাকে তাহলে গিবত হিসেবে ধর্তব্য হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে তা অপবাদ হিসেবে গণ্য হবে। অপবাদ গিবতের চেয়েও নিকৃষ্ট ও ঘৃণীত। গিবত শ্রবণ করা গিবত করার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দুটিই সমান অপরাধ। জীবিত ও মৃত উভয় ধরনের মানুষের গিবত করা হারাম।
গিবত শুধু একটি জঘন্যতম গুনাহ নয়। বরং এটি মানুষের ঈমান-আমলকে ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়া ও আখিরাতকে বরবাদ করে দেয়। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অনুমান ও ধারণা (করে কথা বলা) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’ (বুখারি, হাদিস নং: ২২৮৭)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০১)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন, ‘তোমরা একে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করো না এবং পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত, তোমরা তা ঘৃণাই কর। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অনেকই এ জঘন্য কাজে জড়িত। এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য, যে গিবতের সাথে জড়িত নয়। ঘরবাড়ি, অফিস-কারখানা, রাস্তাঘাট সবখানে গিবত বা পরনিন্দার চর্চা হচ্ছে জোরেশোরে।
আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের লোক থেকে দূরে থাকতে আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তুমি আনুগত্য করো না এমন প্রত্যেক ব্যক্তির, যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছনা, পেছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখোরি করে বেড়ায়, ভালো কাজে বাধাদানকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ।’ (সুরা ক্বালাম : ১০-১৩)
বিশেষ করে রাজনীতির মাঠে মনে হচ্ছে এটাই প্রধানতম কাজ। রাজনীতিতে এধরণের জঘন্য কর্মকাণ্ড সামাজিক অশান্তি বৃদ্ধি পায়, তাই সাবারই বিষয়টি এড়িয়ে চলা উচিৎ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা সহমর্মিতা, সৌজন্য ও সম্মাননজনক আচারণ করা উচিৎ।
লেখক: ইসলামিক স্কলার, সাংবাদিক ও চিকিৎসক (খুলনা)।