|| প্রফেসর ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী ||
ইস্তিসকা (استسقا) অর্থ পানি চাওয়া বা পানির জন্য প্রার্থনা করা। এ শব্দটি আল-কুরআনের সূরা আল বাকারার ৬০ নং আয়াত হতে উৎসারিত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
وَإِذِ ٱسۡتَسۡقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِۦ فَقُلۡنَا ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡحَجَرَۖ فَٱنفَجَرَتۡ مِنۡهُ ٱثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَیۡنࣰاۖ
অর্থ: যখন মুসা আলাই সাল্লাম আল্লাহর কাছে তার জাতি বনী ইসরাইলের ১২ গোত্রের জন্য পানি প্রার্থনা করলেন তখন আল্লাহতালা তাকে লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করতে বললেন। আর সাথে সাথে পাথর থেকে ১২ টি ঝরণা প্রবাহিত হলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনে কয়েক ধরনের নামাজ পড়েন। এরমধ্যে একটি হলো চন্দ্রগ্রহণের সময় সালাতুল খসূফ সূর্য গ্রহণের সময় সালাতুল কসূফ এবং অনাবৃষ্টির জন্য সালাতুল ইস্তেস্কার নামাজ পড়তেন।
চন্দ্রগ্রহণের সময় সালাতুল খসূফ সূর্য গ্রহণের সময় সালাতুল কসূফ এবং অনাবৃষ্টির জন্য সালাতুল ইস্তেস্কা পড়লেই সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ সাথে সাথে ছেড়ে যাবে এবং সালাতুল ইস্তেস্কার কারণে বৃষ্টি হবেই এরকম কোথাও শিউরিটি দেওয়া হয়নি।
তবে এই তিন ধরনের বিপদের সময় তিন ধরনের সালাত খোলা ময়দানে পড়ার নির্দেশনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সপ্রমাণিত।
তবে এ ধরনের সলাতে কে অংশগ্রহণ করবেন কে করবে না কোন ধরনের খোলা মাঠ হতে হবে এ ব্যাপারে কোন দিকনির্দেশনা দেওয়া নেই।
আমার বাবার মুখে শোনা।
আমার গ্রামে একটি আলিম মাদ্রাসা আছে। এ মাদ্রাসার মৌলবি নজির হোসেন নামে একজন ওস্তাদ ছিলেন। আমি তাকে দেখেছি।
একবার এরকম অনাবৃষ্টি হয়। সালাতুল ইস্তেস্কার আয়োজন করা হয়। সালাত শেষে অনেক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করা হয় কিন্তু বৃষ্টি হয় না।
তিনি দোয়া ছেড়ে দিয়ে ঘোষণা করেন এই সালাতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কোন সুদখোর আছেন কিনা। যদি থাকেন দয়া করে চলে যান। তিনি চলে গেলে পুনরায় সালাতুল ইস্তিস্কা আদায় করা হয় এবং সাথে সাথেই বৃষ্টি নামে।
পর্যালোচনা
বিপদের সময় মানুষ স্রষ্টাকে ডাকে। ধর্ম বর্ণ দল মত নির্বিশেষে সকলেই এ কাজটি করে থাকেন।
তবে বিপদের রকম ফের আছে। বিপদ যদি নৌকা বা জাহাজ ডুবি হয় অথবা জলোচ্ছ্বাস অথবা ঝড় তুফান হয় তাহলে মুসলমানদের মধ্যে নামাজী বেনামাজী অন্য ধর্মের মধ্যে ধর্মের অনুসারী
অননুসারী আস্তিক নাস্তিক সকলেই সমস্বরে একসাথে আল্লাহকে যে যেভাবে পারেন ডেকে থাকেন। এটাই স্রষ্টা এবং সৃষ্টির সম্পর্ক।
তবে হ্যা সবাই একনিষ্ঠভাবে স্রষ্টাকে ডাকলেই যে কোন নৌকা বা জাহাজ ডুবেনি জলোচ্ছ্বাস থেকে রেহাই পেয়েছে এমনটিও কিন্তু নয়।
বিপদ থেকে রক্ষা করা এটি স্রষ্টার একান্ত ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। আর সুখে-শান্তিতে বিপদে-আপদে সৃষ্টি স্রষ্টাকে ডাকবে এটাও একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার।
তাই সালাতুল ইস্তিস্কা নিয়ে অনর্থক তর্ক বিতর্ক করা বা তাতে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করা অথবা কারো অনুমতি নেওয়া দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
লেখক: অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ এবং সাবেক ডিন, থিওলজী এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।