কবি জাহরা-ই-নূর
তোমাকেও শুভেচ্ছা সখা, শিউলি ঝরা শরৎ ভোরের।
ঘুম জড়ানো চোখে, শিউলি তলায় তুমি যখন,
অমনি মায়ের পূজোর মন্ত্র, আসলো তখন তোমার কানে।
আমিও তখন চোখ মেলেছি, মায়ের শূন্যে তোলা দুহাত পানে।
বকুনি খেয়ে আলসে মেয়ে, তখনও শুয়ে,
বাবার গলায় হাত জড়িয়ে।
তুমি তো লক্ষ্মী ছেলে, স্নানটি সেরে, শান্ত খেতাব
দাদুর মুখে নাও কুড়িয়ে।
খানিক পরে-
বেগুন ভাঁজার গন্ধ আসে রান্না ঘরের দেউড়ি বেয়ে,
ভাতের থালায় তুমি-আমি, অপেক্ষাতে থাকছি চেয়ে।
গরম ভাতের ধোঁয়ার উপর ঘিয়ের ফোঁটা,
আঃ কি মজা! খেলাম বসে, তৃপ্তি মনে।
হঠাৎ, চমকে গেলাম, মায়ের গলার আওয়াজ শুনে,
তৈরি আমি ফ্রকটি পরে, গুছিয়ে মাথার চুলের বেণী।
বাহ! বেশ তো খোকা, হচ্ছ বড়, পাকা তোমার চোখের চাহনি
ছোট্ট সেজে দারুন বেসে, দেখে মনে হয় কথা শেখনি।
যাচ্ছ তুমি, বইয়ের গোছা হাতে ধরে কোমর ঠেলে
লাগছে বড় সাহসী ছেলে।
আর আমি যাচ্ছি, বইয়ের ছায়ায় পথটা ঢেকে
কি জানি কোন ভয় লুকিয়ে?
হঠাৎ তোমার পায়ের শব্দ বাজলো মনে
মুচকি হেসে ভয় পালাল, যেমনটা হয় লজ্জা পেলে।
পূজোর ছুটি, কোথায় যাবে? ভাবছ নাকি?
আসবে আমার গাঁয়ের কোলে?
ভাবছ কেমন, কি হবে এলে?
বুঝবে তখন, কেমন মজা, মায়ের হাতের রান্না খেলে।
অবশ্য তোমার গাঁয়ের মত অত সুন্দর নয় জানি
তবে, এখানেও সুপারি আর নারকেল গাছে দারুন সুরে বাতাস দোলে।
এখানেও জোছনা ছড়ায় বাঁশ বাগানের আঁধার কোলে
বাদুর, পেচা, শেয়ালের ডাক বেজায় রকম ভয়টা তোলে।
জোছনার আলো, বাতাসের সুর, পাখিদের ডাক
সবই যেন ডাকে আমায় কেমন যেন সরল মায়ায়
ঘুমের মাঝেও আসে আবার স্বপ্ন দেখায় তোমার কায়ায়।
শীতের আবেশ রাত্রি কালে আমিও পাই বৃষ্টি হলে
গাঁয়ের ছেলে সমুৎসাহে ঈদের দিনেও ক্রিকেট খেলে।
যেদিন তুমি পাশ করলে মা-বাবাকে করলে প্রণাম
আমিও সেদিন বাহবা পেলাম দাদা জানকে জানিয়ে সালাম।
অন্য নামে, অন্য ক্ষণে আসলে বুঝি বেজায় ঢঙে
শীত, বর্ষার রূপ সাজিয়ে, আঁকলে ছবি নানান রঙে।
রঙের খেলায়, তারার মেলায়, সন্ধ্যা কালেও বৃষ্টি নামে
অন্ধকারেও বিজলিরেখা আলোক ছড়ায় আকাশ বনে
সেই আলোকের ছিটেফোঁটা লাগলো আমার-তোমার প্রাণে।
তাইতো আজও-
সন্ধ্যাকালে তোমার পাড়ায়, তুলশী তলায় প্রদীপ জ্বলে
সেই বেলাতে আমার মনেও মুয়াজ্জিনের আযান দোলে।
আচ্ছা? আজকে কেন সময়ভুলি খুলছি এত গল্প ঝুলি
পুরনো কথায় লুকিয়ে আড়াল ধরছি কত রঙের তুলি
ছোট বেলায় একই সাথে, কুড়াইনি তো শিউলি, বেলি।
আনমনেতে ভাবছি তবু তোমার সাথেই পথটা চলি
ধন্য হতাম, পেতাম যদি তোমার সোনার চরণ ধূলি।