
|| জেলা প্রতিনিধি (রাজশাহী) ||
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। উপজেলার ২ নম্বর কিসমত গনকৈড় ইউনিয়নের ধামইন গ্রামের একটি বিলে দীর্ঘদিন ধরে পুকুর খননের কাজ চলায় আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশ ও কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
স্থানীয়রা জানান, পুকুর খননের মাটি ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পরিবহনের সময় সড়কের ওপর মাটি পড়ে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হলেও দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে খননকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এ অবস্থায় প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
পুকুর খননকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির মতো ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি চক্র আর্থিক শক্তির জোরে ভাড়াটে লোক ব্যবহার করে জমির মালিক ও কৃষকদের ভয় দেখিয়ে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহীর একটি উপজেলায় পুকুর খননকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনার পর দুর্গাপুরেও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাহেরপুর এলাকার এক মাছ ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীরা আড়াল থেকে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মাধ্যমে কাজ চলায় ভয়ের কারণে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী কৃষক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, “আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই পাশের জমি থেকে মাটি ফেলে আমার সরিষার ক্ষেত নষ্ট করা হয়েছে। অথচ আমি বৈধভাবে কয়েক বছরের জন্য জমি লিজ নিয়েছি।” একই ধরনের অভিযোগ করেন আরও কয়েকজন কৃষক। তাদের দাবি, আবাদি জমি জোরপূর্বক মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশতুরা আমিনা জানান, পুকুর খননের ঘটনায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে পুলিশ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, মামলার পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে সে জামিনে মুক্ত হয়েছে। প্রশাসনের পরবর্তী অভিযানে পুলিশ সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মহিনুল হাসান বলেন, অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রুত আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহল অবিলম্বে ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
