
|| আজিজুল হক | ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে দীর্ঘদিনের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন গালাব উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। একই সঙ্গে আনোয়ার হোসেনের ক্ষেতে কাটা অবস্থায় রাখা পাকা ধান লুট করে নিয়ে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল মতিন–লাভলু গংয়ের ভূমিদস্যু চক্র। ঘটনাটি এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিণ ধলডাঙ্গা গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল মতিন (৪০), লাভলু মিয়া (৪৮), হারুণ (৫২) ও শাহ আলম (৫৬)-এর সঙ্গে আনোয়ার হোসেন ও তার ভাই গালাব উদ্দিনের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় মতিন–লাভলু গং বিভিন্ন সময়ে প্রতিপক্ষের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৬ ডিসেম্বর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মতিন–লাভলু গংয়ের নেতৃত্বে ১৪–১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল লাঠি, রড, রামদা, বটি ও ছুরি নিয়ে আনোয়ার হোসেনের জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে। তারা জমিতে কাটা ধানের আঁটি নিজেদের বাড়ির দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলে আনোয়ার হোসেন ও তার লোকজন বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এ সময় কয়েকজন আহত হন। গালাব উদ্দিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় এবং লুট করে নেওয়া হয় ক্ষেতে থাকা ধান।
স্থানীয়রা চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। গালাব উদ্দিনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় গালাব উদ্দিনের ভাতিজা মনির হোসেন বাদী হয়ে ৮ ডিসেম্বর ভূরুঙ্গামারী থানায় আব্দুল মতিন, লাভলু মিয়া, হারুণ, শাহ আলমসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন (মামলা নং-০৬, তারিখ: ৮/১২/২০২৫)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনামুল হকের নেতৃত্বে পুলিশ মূল আসামি আব্দুল মতিনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
তবে অন্যান্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাদী ও তার স্বজনদের ওপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, “মামলা না তুললে পুনরায় হামলা, রাস্তায় তুলে মারধর, এমনকি খুন করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে মতিন–লাভলু গং।”
তিনি আরও জানান, ওই চক্রটি তার ৯ শতক পুকুর, ১৫ শতক বীজতলার জমি, ১৫ শতক ইউক্যালিপটাস বাগান এবং ৫৬ শতক আবাদি জমিতে চাষাবাদে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এতে পুরো পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুয়াসির মামুন মুন জানান, “গত ১১ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
