বুধবার, নভেম্বর ১৯

খুলনায় ট্রিপল মার্ডার: মামলা দায়ের, তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবারও

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

খুলনা শহরের লবণচরা থানা এলাকার দরবেশ মোল্লা গলিতে দৃষ্টিকাড়া ট্রিপল হত্যাকাণ্ডে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। শিশু মোস্তাকিম (৮) ও ফাতিহা (৬) এবং তাদের নানি মহিতুন্নেছাকে হত্যার ঘটনায় পরিবারের ভেতরকার বিরোধ ও সম্পর্ক জটিলতা তদন্তকারীদের নজরে এসেছে।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে শিশু দু’টির বাবা শেফার আহমেদ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে লবণচরা থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর পুলিশের সন্দেহভাজন তালিকায় ভুক্তভোগী পরিবারের কয়েকজন সদস্যও রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিবারের একজনকে হেফাজতে নিলেও তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

ঘটনার দিন যা ঘটেছিল

এজাহারে শেফার জানান, রবিবার সকালে সন্তানদের শাশুড়ির কাছে রেখে তিনি অফিসে যান। বেলা সাড়ে ১২টায় মেয়েকে দাঁতের চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পৌঁছে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান।
রাতে স্ত্রী রুবি আক্তার বাড়ি ফিরে মেইন গেট বন্ধ পেয়ে সন্দেহ হলে পাশের ফাঁকা জায়গা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে গেট খোলেন। ভেতরে প্রবেশ করেই তিনি বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ঘরের দরজা খুলে থাকতে দেখেন। পরে ঘরের মুরগির খামারের ভেতর মহিতুন্নেছার লাশ এবং পাশে অচেতন অবস্থায় দুই শিশুকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক শিশু দুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবার নিয়ে প্রশ্ন, আচরণে অসঙ্গতি

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে—শিশু দু’টির মা রুবি আক্তার তদন্তকারীদের প্রশ্নে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। ঘটনার পর তিনদিন কেটে গেলেও তাকে কান্না করতে দেখা যায়নি। আশেপাশের মানুষকেও এড়িয়ে চলছেন তিনি। পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও রুবিই ছিলেন প্রভাবশালী, তার নামে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে বলেও জানা গেছে।

জমি নিয়ে বিরোধ, পরিবারের ভেতর দ্বন্দ্ব ও মাদক–সবই তদন্তের আওতায়

শেফার আহমেদ অভিযোগ করেছেন, রূপসার ভবানীপুর গ্রামের জমি নিয়ে তার মামাতো ভাই শামীম আহমেদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। শামীম নাকি জাল দলিল তৈরি করে জমি দখলের চেষ্টা করেছিলেন এবং অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।

এ ছাড়া ঘটনার বাড়িটি মাদক কারবারিদের একটি সক্রিয় স্পট হিসেবে পরিচিত—এ তথ্যও তদন্তকারীরা বিবেচনায় রেখেছেন।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিহত মহিতুন্নেছার এক দেবরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে। তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেও পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে চাপে রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য

লবণচরা থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন,
“মামলা হয়েছে, আমরা বিভিন্ন দিক যাচাই করছি। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ইটসহ সব আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। শিশু দুটির মাথায় ইট দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পারিবারিক বিরোধকে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত এগোচ্ছে। প্রকৃত দোষীদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।”

এ ঘটনায় সিআইডি, পিবিআই, ডিবি ও র‍্যাবের পৃথক টিমও ছায়া তদন্ত করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *