
২৭ লাখ টাকায় নতুন টিনশেড ঘর, পুরোনো ভবন রয়ে গেছে ধ্বংসস্তুপে
|| কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ||
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি সংস্কার প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি ২৭ লাখ টাকার বরাদ্দে পুরোনো অফিস ভবন সংস্কারের কথা থাকলেও বাস্তবে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র ৩০ বর্গফুট আয়তনের একটি নতুন টিনশেড ঘর।
সরকারি নথিতে প্রকল্পের নাম উল্লেখ রয়েছে— “অফিস ভবন সংস্কার কাজ সম্পন্ন”। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো ভবনটি আগের মতোই ধসে পড়া অবস্থায় পড়ে আছে; দেয়ালে ফাটল, ছাদে চিড়, চারপাশে আগাছায় ঘেরা এবং সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। তার পাশেই কাঠ ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত একটি ছোট টিনশেড ঘর এখন পাউবোর অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্থানীয় ঠিকাদারদের দাবি, এমন একটি টিনশেড ঘর নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৯ লাখ টাকার বেশি খরচ হয় না। কিন্তু সরকারি বিল দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ টাকা—যা সরাসরি সরকারি অর্থ আত্মসাতের ইঙ্গিত বহন করে।
২০২৩–২৪ ও ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ‘দুধকুমর প্রকল্পের আওতায় অফিস ভবন সংস্কার’ শিরোনামে এই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তবে প্রকল্পের নাম ‘সংস্কার’ হলেও, বাস্তবে সম্পন্ন করা হয়েছে ‘নতুন নির্মাণের কাজ’।
প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব ছিল রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ব্রাদার্স (আলমনগর)-এর হাতে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কাজটি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বেলাল কনস্ট্রাকশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাল কনস্ট্রাকশনের মালিক বেলাল হোসেন বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।”
নাগেশ্বরী পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্না হক বলেন, “পুরোনো ভবনটি একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকায় সংস্কারের অর্থ ব্যবহার করেই টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়।”
তিনি আরও দাবি করেন, “এই কাজটি বিভাগীয় প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়েছে।”
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল হাসান বলেন, “আমরা সমন্বয় করেই কাজটি করেছি। এতে নীতিগত কোনো সমস্যা নেই।”
রংপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মোহা. সরফরাজ বান্দা বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি, অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানি না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এক খাতের অর্থ অন্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে কীভাবে হয়েছে, তা যাচাই না করে কিছু বলা ঠিক হবে না।”
দুধকুমর প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক ও বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্বাঞ্চল) মাহবুবুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমার মনে নেই। কয়েকদিন পর বিস্তারিত জানাতে পারব।”
তবে প্রকৌশলী মুন্না হকের দাবি, মাহবুবুর রহমানের নির্দেশেই সংস্কারের অর্থ ব্যবহার করে নতুন টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, “এই ধরনের অনিয়ম শুধু সরকারি অর্থের অপচয় নয়, এটি প্রশাসনিক জবাবদিহিরও চরম ব্যর্থতার উদাহরণ। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি।”
ধসে পড়া পুরোনো পাউবো ভবনের পাশে নতুন নির্মিত ছোট টিনশেড ঘর—এখন সেটিই নাগেশ্বরী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস।
