
|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||
খুলনার কৈয়া-রায়েরমহল সড়কের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার (২৬ অক্টোবর) খুলনা দুদকের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিনে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর নমুনা সংগ্রহ করে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, সড়কের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও কার্পেটিংয়ের স্তর মাপা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে তা নকশা অনুযায়ী পাওয়া গেছে। তবে ব্যবহৃত খোয়া, বালি ও বিটুমিনের মান যাচাইয়ের জন্য নমুনাগুলো ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া খুলনা এলজিইডি, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের দপ্তর থেকে ১১ কোটি টাকার প্রকল্প-সংক্রান্ত সকল তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বলেন, “প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় রাস্তার অনিয়মের খবর প্রকাশের পর আমরা তদন্তে নেমেছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। মাপ সঠিক থাকলেও নির্মাণ সামগ্রীর মান যাচাই না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত মন্তব্য করা যাবে না।” তিনি আরও জানান, তদন্তকালে ওভারলোডিংয়ের বিষয়ে তিনটি মালামালবোঝাই ট্রাকের চালকের জবানবন্দি নেওয়া হয়, যারা প্রত্যেকে ২৮ থেকে ২৯ টন পর্যন্ত পণ্য বহনের কথা স্বীকার করেছেন।
খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, “ওভারলোডিং যানবাহনের চলাচলই রাস্তাটির ক্ষতির প্রধান কারণ। আমরা দুদককে কাজের এস্টিমেটসহ সব নথি সরবরাহ করেছি।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় একই সড়কের বিভিন্ন অংশে মোট ১১ কোটি টাকার কাজ হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৈয়া বাজার থেকে রাজবাঁধ পর্যন্ত ২.১ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বরাদ্দ হয় ৩ কোটি টাকা এবং রাজবাঁধ কালভার্ট থেকে ফলইমারী পর্যন্ত ৬০০ মিটার অংশে বরাদ্দ হয় ৮০ লাখ টাকা। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্পের অধীনে মোস্ত’র মোড় থেকে কৈয়া বাজার পর্যন্ত ৩.২ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
তবে ১১ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শেষ না হতেই কৈয়া-মোস্ত’র মোড় সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ এবং অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তা খানাখন্দে ভরে গেছে। কোথাও কার্পেটিং নেই, কোথাও খোয়া ও বালির চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না—যেন সারি সারি ছোট কূপ খোঁড়া হয়েছে রাস্তার বুকে।
দুদক জানিয়েছে, ল্যাব পরীক্ষার ফল হাতে পেলে রাস্তার কাজের মান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করা হবে এবং অনিয়মের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে এই সড়ক নিয়ে প্রথম “আলোকিত দৈনিক”- এ প্রতিবেদন করা হয়, পরবর্তীতে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে ব্যাপক লেখা-লেখির পরে দুদক তদন্তে নেমেছে।
