বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৩

শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব এবং তাদের দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে সরকারকে ধন্যবাদ।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ভ্রাতৃগণ। আপনাদের যৌক্তিক দাবি এবং আন্দোলনের পক্ষে আমার মসিযুদ্ধ অব্যাহত ছিল। আপনাদের প্রাপ্তি পর্যন্ত আমি থামিনি। আমি আজকেও থামবো না। তবে সেটা আপনাদের পক্ষে নয়; আমার সন্তানদের পক্ষে। যাদের আপনারা পিতা, অভিভাবক, দায়িত্বশীল, ভবিষ্যৎ নাগরিক গড়ার কারিগর।

এবারের উচ্চ মাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষার ফলাফলে
যে ধ্বস নেবেছে, তা আমাকে ব্যথিত করেছে। এ ব্যথাটি সকল শিক্ষকের মনে লাগলেই আমরা তাদের পরিত্রাণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারব, অন্যথায় নয়।

একটি বিষয় ধ্রুব সত্য যে, দিন দিন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি ক্লাসে তাদের উপস্থিতির হার খুবই নাজুক হচ্ছে। বিশেষত কিছু কিছু মাদ্রাসায়।

এবারের উচ্চ মাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষার ফলাফলে কিন্তু বিষয়টি স্পষ্টত প্রতিভাত হয়েছে। দু’শতাধিক প্রতিষ্ঠানের পাশের সংখ্যা শূন্যের কোঠায়।
সব প্রতিষ্ঠান বাদ দিলেও এ দু’শ প্রতিষ্ঠানকে যদি আমরা উদাহরণ হিসেবে ধরে নেই তাহলে ধরে নিতে হয় দু’শ প্রতিষ্ঠানের কোন প্রধান নেই। প্রধান নয় ছিলেন না এসব প্রতিষ্ঠানে কি দু’দশ জন শিক্ষকও ছিলেন না যারা তাদের প্রতিষ্ঠানের দু/পাঁচ জন শিক্ষার্থীর পাশের ব্যাপারে দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে পারেন? এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কি খুব বেশি অবিচার হবে?

আমরা আমাদের স্বার্থ নিয়ে ছাত্রদেরকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে আন্দোলন করি যতদিন না দাবি আদায় হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তো আন্দোলন করতে পারে না। তারা যদি একবার আন্দোলনে নামে তাহলে কিন্তু আমরা পিঠ বাঁচাতে পারব না।

তাই আগামী পরীক্ষাতে যেন শিক্ষার্থীদের পাশের হার ষাটের ঘরে থেকে আশির ঘরে উঠে আসতে পারে সে বিষয়ে সবার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ‌

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব সমস্যার কারণে বেশি সংখ্যক হারে শিক্ষার্থী ফেল করছে অথবা শিক্ষার্থী কম ভর্তি হচ্ছে অথবা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে তার কিন্তু বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। নিম্নে এর কিছু উল্লেখ করা হলো-
১. প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দুর্বলতা
২. প্রতিষ্ঠান প্রধানদের গাফিলতি
৩. প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অযোগ্যতা
৪. প্রতিষ্ঠান প্রধানদের রাজনীতির সাথে বেশি মাখামাখি।
৫. প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতিষ্ঠানের চাইতে কমিটি তথা সভাপতিদের মনযোগিয়ে চলার মানসিকতা।
৭. প্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষকদের কমিটমেন্ট না থাকা।
৮. শিক্ষকদের শিক্ষকতা পেশা থেকে ছিটকে পড়া।
৯. শিক্ষকদের ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়া। কারো কারো বিশেষত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকগণ কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়া।
১০. শিক্ষার্থীদেরকে আপন করে নেওয়ার মানসিকতা না থাকা।
১১. শিক্ষক শিক্ষার্থীর মাঝে আন্তরিক পরিবেশ গড়ে না ওঠা।
১২. শিক্ষা বিভাগে দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা।
১৩. তাদের কারো কারো ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকা।
১৪. প্রশাসনের তদারকি না থাকা।
১৫. কমিটির লোকদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশের চাইতে অর্থের দিকে নজর বেশি থাকা।
১৬. প্রতিষ্ঠানের সাথে অভিভাবকেরদের সম্পর্ক না থাকা।
১৭. সন্তানদের প্রতি অভিভাবকেরদের গাফিলতি থাকা।
১৮. প্রতিষ্ঠানে ক্লাস কম হওয়া।
১৯. মোবাইলের অবাধ ব্যবহার।
২০. সহ শিক্ষা।
২১. ছাত্রীদের হিজাব না করা।

আমি অন্তত দু’শতাধিক স্কুল কলেজ মাদ্রাসা সরকারি এবং নিজের উদ্যোগে পরিদর্শন করেছি। এতে আমার কাছে সবচাইতে বড় তিনটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে।

প্রথমত: প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কারণে।
দ্বিতীয়ত: শিক্ষকদের কারণে।
তৃতীয়ত: অভিভাবকদের তাদের সন্তানের খোঁজ খবর না রাখা।
চতুর্থত: প্রতিষ্ঠানের কমিটির কারণে।

এ বিষয়ে প্রতিকারে আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হতে পারি। এখানে কারো প্রয়োজন নেই।
প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যদি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আন্তরিক হন এবং শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদেরকে নিজের সন্তানের মত আপন করে নিতে পারেন, তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি হারতো কমবেই, বরং তাদের ফেলের হারও ৫০% কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষক ভাই-বোনদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা আপনাদের দাবি আদায়ে যেমন আন্তরিক এবং সচেষ্ট ছিলেন। নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। আপনারা ক্লাসেও ফিরেননি। আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলেই কেবল বাড়ি ফিরেছেন।

অনুরূপভাবে আপনাদের কাছে দেওয়া বড় আমানত দেশ জাতির ভবিষ্যৎ আমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে আপনারা ভাবুন। ওদের কৃতকার্য না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এ কমিটমেন্ট থাকলেই কেবল আমরা প্রতিষ্ঠানের সফলতা দেখব অন্যথায় নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *