
নতুন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ
|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||
খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে ১৯ শয্যার ভবনে। ফলে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোগীর চাপ বাড়লেও ভবন সংকটে সীমিত পরিসরে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবন নির্মাণের জন্য খোঁড়া গর্তে ময়লা-আবর্জনা জমে পানি দূষিত হচ্ছে। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা বেড সংকটের কারণে হাসপাতালের ছাদে নির্মিত টিনসেড ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অবকাঠামোগত দুরাবস্থা ও প্রয়োজনীয় সেবা না থাকায় ন্যূনতম চিকিৎসার জন্যও মানুষকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের খুলনা শহরে যেতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে কয়রা উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আমাদী ইউনিয়নের জায়গীরমহল গ্রামে স্থাপিত হয় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১১ সালে সেখানে ১৯ শয্যার একটি ভবন নির্মিত হয় এবং পরবর্তীতে সেটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে ৩১ শয্যার পুরোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ২০২২ সালে অপসারণ করা হয়। একই বছরের ১৬ আগস্ট ৩১ শয্যার তিনতলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি পায় মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স ও মেসার্স শামীম আহসান ট্রেডার্স।
তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮০ টাকা। কাজের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ১২ জুন। নির্ধারিত সময়ে কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বারবার চিঠি দিলেও তেমন সাড়া মেলেনি। একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে দুই দফা মেয়াদ শেষে অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় কাজ বাতিলের সুপারিশ করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট। মেয়াদ ছিল ৯ মাস। কিন্তু দুই বছর পার হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৮ শতাংশ। এর বিপরীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। কাজের ধীরগতির কারণে চলতি বছরের ১৯ মার্চ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ বাতিলের সুপারিশ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে কাজটি করছিলেন খুলনা-৬ আসনের সাবেক এমপি মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এ বিষয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র ৯ জন। এর মধ্যে একজন আছেন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে। চিকিৎসক সংকট, অবকাঠামোগত দুরাবস্থা ও প্রয়োজনীয় সেবা না থাকায় মানুষকে বাধ্য হয়ে খুলনা শহরে চিকিৎসার জন্য ছুটতে হচ্ছে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ানসহ সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। নেই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও আবাসিক ভবনের সুব্যবস্থা না থাকার অজুহাতে তারা কয়রায় অবস্থান করেন না। মাঝেমধ্যে খুলনা থেকে দু-একদিন এসে সেবা দেন।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “হাসপাতালের ৩১ শয্যার ভবন ভাঙার পর থেকেই শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। সীমিত জায়গায় রোগীদের রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের খুলনার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইখতেয়ার হোসেন বলেন, “কাজের ধীরগতির কারণে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজের মেয়াদও শেষ। দ্রুত নতুনভাবে ভবন নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।”