
|| আজিজুল হক | ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি ||
শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের অনৈতিক চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হওয়ায় বাণিজ্যিক জমিকে দোলা ও নালা বলে আখ্যায়িত করে স্বল্প মূল্যে জমি অধিগ্রহণ করার চেষ্টায় স্থানীয় অর্ধ শতাধিক জমির মালিক চরম ক্ষতিগ্রস্থের সম্মুখীন হয়েছেন।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও জমির মালিকরা জানায়, কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বানুর কুটি মৌজায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সোনাহাটে গত ১৭ নভেম্বর ২০১২ সালে শুল্ক স্টেশন চালু হয়। এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার স্থল বন্দরটি নির্মানে এলাকায় একর প্রতি ৪৫ লাখ টাকায় ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে। পরবর্তিতে স্থল বন্দরটি সম্প্রসারন হলে সরকার আরো ৫ একর জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়।
এরই প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন জমি সার্ভে করে গত ২৩ সালের ৯ এপ্রিল স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নম্বর আইন এর ৮ ধারার (০৩) (ক) উপধারা মোতাবেক ভুমি অধিগ্রহন করে স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিগণকে নোটিশ জারী করেন। এতে ভুক্তভোগি জমির মালিকরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনৈতিক চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে উপধারা (১) এর দফা (ক) বর্ণিত বাজার দরের উপর অতিরিক্ত ক্ষতিপুরনকে সম্পূর্ণরূপে অবজ্ঞা করে একর প্রতি মাত্র ২০ লাখ ৭২ হাজার নির্ধারণ করে নোটিশ জারী করেন। অথচ বর্তমানে উক্ত জমিগুলো একর প্রতি ৩ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ৮ ধারায় নোটিশ পাবার পর জানতে পারেন তাদের অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বৈষম্যমূলক দর নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের উচু ভিটি বাণিজ্যিক জমিকে দোলা ও নালা বলে আখ্যায়িত করে নিম্ন দর নির্ধারণ করা হয়। অথচ তাদের জমির মূল্য প্রতি শতক ৩লাখ টাকা হওয়ার পরেও সংলগ্ন অন্যান্ন জমিগুলো রহস্যজনক কারণে মূল্য সঠিক করে তাদেরকে নোটিশ করা হয়েছে।
পরবর্তিতে জমির দর পুনঃ নির্ধারণের জন্য গত ১৮ এপ্রিল ২৩ সালে কুড়িগ্রাম জেলা প্রসাশকের বরাবর আবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসক দর পুনঃ নির্ধারণের বিষয়টি নিস্পত্তি না করে বিভিন্ন বাহানা করে আমাদের ঘুরাতে থাকেন। বাধ্য হয়ে বিষয়টি সুরাহার জন্য বিভাগীয় কমিশনার রংপুর বরাবর আবেদন করি। তিনি ১৩ জুন ২৩ সালে শুনানী গ্রহন করেন এবং ১৯ আক্টবর ২৩ সালে প্রস্তাবিত জমির মধ্যে যে সব জমির রেকডিয় শ্রেণি ডাঙ্গা এবং মাটিভরাট করে উচু করা হয়েছে। সে সব জমির শ্রেণি ভিটি ধরে ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারনের জন্য আদেশ প্রদান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের বরাবর জাবেদা কপি প্রেরণ করেন। তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ তোয়াক্কা না করে আমাদের ডেকে নেন এবং তার কোন করণীয় নেই বলে আমাদেরকে আরবিট্রেটরে মামলা করে রায় নিয়ে আসতে বলেন। পরে আমরা কোন উপায়ন্ত না পেয়ে ২০২৪ গত তারিখে জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে আরবিট্রেটর ট্রাইবুনাল ১ম আদালতে কুড়িগ্রাম মোকদ্দমা দায়ের করি । যার মামলা নম্বর ০১/২০২৪ ইং আরবিট্রেটর। মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক একটি কমিশন গঠন করেন, সে কমিশনার নালিশী জমিতে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন মাপযোগ ও সরেজমিন তদন্ত করে বিজ্ঞ জাজ বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনে নালিশি জমিগুলোতে কয়লা, পাথর ও ওজন স্টেশন রয়েছে এবং বাণিজ্যিক এলাকা ঘোষণা করেন। মামলাটি বর্তমান বিচারাধীন রয়েছে।
অথচ জেলা কতৃপক্ষ জমির মূল্য নির্ধারনের ক্ষেত্রে উক্ত জমির পারি-পার্শিক জমির দলিলের মুল্য না ধরে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নদী ও বালু শ্রেণির বিভিন্ন জায়গা দলিলে জমির মূল্য সমন্বয় করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শতক প্রতি মুল্য হ্রাস করেছেন। তারা নালিশী জমির সংলগ্ন গুলোতে অসদউপায় অবলম্বন করে একর প্রতি ক্ষতিপুরন ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৩ শত ৩৩ টাকা মূল্য নির্ধারণ করলেও আমাদের জমিকে তিনি মাত্র ২০ লাখ ৭২ হাজার ৫ শত টাকা নির্ধারণ করেন। যা প্রতি একরে ২৪ লাক্ষ ৩০ হাজার ৮ শত ৩৩ টাকা কম। অথচ গত ২০২০-২০২১ সাল হতে উল্লেখিত জমিগুলো বানিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী সরকার খাজনা নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী মোঃ সমশের আলী জানান উক্ত এলাকায় ৫ একর ১৩ শতাংশ জমির ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের এল এ শাখার সার্ভেয়ার ছয়ফুল ইসলাম মোট মূল্যের ২০% টাকা উৎকোচ দাবি করেন। তার এ অর্থের অনৈতিক প্রস্তাবে আমরা রাজী না হওয়ায় আমাদের জমির ৪৭ জন মালিককে জমির সর্বনিম্ন দর ধরে আমাদের চরমভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তৎকালীন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর এর বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করি। সেখানেও আমাদের প্রতারিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শাখার ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি যার স্মারক নং ১০ তারিখ ১২ জানুয়ারী ২০২৫ বিষয়টির তদন্তের জন্য আমাকে ডেকে এনে সারাদিন অফিসে বসে রেখে সন্ধায় আমাকে চলে যেতে বলেন। সে তদন্তের আজও কোন আলোর মুখ দেখা পাওয়া যায়নি। আমরা এর যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছি।