
|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||
অসময়ে তরমুজ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি ইউনিয়নের চাষি বেল্লাল।
ছয় বছর আগেও অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সংসারে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ছিল টানাপোড়েনের জীবন। একার আয়ে সংসার চালানো ছিল কষ্টসাধ্য। তবে অসময়ে তরমুজ চাষ তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। ঘেরে মাছ চাষের পাশাপাশি অফসিজন তরমুজ চাষ করে আজ তিনি হয়েছেন স্বচ্ছল।
শুরুতে নিজের দুই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন বেল্লাল। লাভ হওয়ায় পরের বছর বর্গা জমি নিয়ে চাষের পরিমাণ বাড়ান। ধীরে ধীরে আয় বাড়তে থাকে। পরে মাছের ঘের তৈরি করে চার পাড়ে মাচা বানিয়ে ঝুলন্ত তরমুজ চাষ শুরু করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘেরের পাড়ে বাঁশের খুঁটির ওপর নেট দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। তাতে ঝুলছে সারি সারি তরমুজ। প্রতিটি তরমুজ নেটের ব্যাগে ঝুলছে নিরাপদে। ঘেরে দেশি নানা প্রজাতির মাছও রয়েছে। পাড়ে পথের ধারে লাগানো করলা, লাউ, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন সবজি বাড়তি আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে।
বেল্লাল জানান, সিজনের তুলনায় অফসিজন তরমুজ চাষে খরচ কম হয়। বিলের ভিতর সিজনের তরমুজে সেচের খরচ বেশি, অথচ ঘেরের পাড়ে চাষে আলাদা সেচের প্রয়োজন হয় না। এক বিঘা জমিতে গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকার বেশি। চলতি মৌসুমে অন্তত ৬ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন দুই লাখ টাকার তরমুজ।
তিনি আরও জানান, উন্নত জাতের পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূল বীজ বেছে নেওয়া, নেটে তরমুজ ঝুলিয়ে দেওয়া, নিয়মিত পোকা দমনে স্প্রে করা—এসবই অফসিজন তরমুজ চাষে জরুরি। প্রতিটি তরমুজের ওজন ৩.৫ থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। স্বাদও মৌসুমী তরমুজের চেয়ে ভালো। পাইকাররা ক্ষেতে এসে ১৮০০-১৯০০ টাকা মণ দরে কিনে নিচ্ছে। ফলে খরচ বাদেও ভালো লাভ হচ্ছে।
এখন আর সংসারে টানাটানি নেই। ছেলে-মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়াতে পারবেন বলে আশাবাদী বেল্লাল। তার স্বপ্ন আগামী বছর চাষের পরিসর আরও বাড়িয়ে আয় দ্বিগুণ করা।
বেল্লালের প্রভাবে একই এলাকায় অনেক কৃষক এখন অফসিজন তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পাশের ক্ষেতে তরমুজ চাষি গোবিন্দ বলেন, “বেল্লালের দেখাদেখি আমিও দুই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। আয়ও বেড়েছে।”
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, খুলনার মাটি ও আবহাওয়া অফসিজন তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ হচ্ছে বটিয়াঘাটায়। এ বছর কৃষি অফিস থেকে সার, বীজ ও বালাইনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “অফিস সবসময় কৃষকদের সহযোগিতায় প্রস্তুত। খুলনায় এ মৌসুমে ৩০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।”