বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

ভূ-রাজনীতিতে ভারত-চীনের বন্ধুত্ব ও আমেরিকার শুল্ক দানব!

তামিলনাড়ুর মানুষ এস. জয়শঙ্কর, পেশায় এক সময়কার জাদরেল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হয়ে দাপিয়ে বেরিয়েছেন সারা বিশ্ব। পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন। তিনি তাঁর একটি বইতে লিখেছিলেন যার সারমর্ম হচ্ছে, “ভারকে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে নতুন করে বন্ধুত্বের কথা ভাবতে হবে।” ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্ক স্থাপনের জন্য অনেকদূর অগ্রসর হয়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বের সাথে নিজেদের কূটনৈতিক সম্পর্কও কিন্তু অনেকদূর পর্যন্ত গিয়েছে, যা গভীর থেকে গভীর হয়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে ট্রাম্প প্রশাসন অনেকটা উগ্রনীতির ফলশ্রুতিতে বিশ্ব পরিস্থিতি অনেকটা না বলে পুরোটা পাল্টে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর বেশকিছুদিন ভারতের সাথে সম্পর্কের জায়গা হয়েছিল রোমাঞ্চকর। নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্টজন হিসেবে ট্রাম্পের পরিচিতি ছিল। সম্পর্কের অবনতির সূত্রপাত কিন্তু কিছু উগ্র সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে।

ইসরায়লকে পরোক্ষভাবে এবং অনেকসময় প্রতক্ষ্যভাবে সমর্থন প্রদান, ইরানের পারমাণবিক স্থপনায় বোমা হামলা সাড়া বিশ্বে ক্ষোভ সঞ্চার করেছে। ভারত কিন্তু ইরান এবং গাজার সাধারণ মানুষের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনার প্রসার ঘটাতে গিয়ে শুল্কনীতি প্রণয়ন করে মার্কিন প্রশাসন, যা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপ নীতি মনে হচ্ছে বিমাতাসুলভ আচরণ। ইতোমধ্যে দরকষাকষি করে অনেক দেশ কিছুটা সুবিধা পেলেও বিনিময়ে যেটি করতে হচ্ছে সেটি কিন্তু অনেক দেশের অর্থনীতির সাথে বেমানান। বোয়িং বিমান, যুদ্ধ বিমান ও যুদ্ধ অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক দেশকে ভাবতে হবে। তার অর্থনীতির সাথে খাপ খায় কিনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি অনেকটা শুল্কযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক দেশ সেটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে।

এসসিও (সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা) সম্মেলন অনেকটা পরির্বতন ঘটিয়ে দিয়েছে ভূ-রাজনীতিতে। ইতোমধ্যে ভারতীয় জনপ্রিয় গণমাধ্যম এনডিটিভি আযোজিত ‘‘ডিফেন্স সামিট-এ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘‘চিরকাল কেউ বন্ধু বা শত্রু থাকে না, এই বক্তব্য দিয়ে কাকে কি বোঝাতে চাইলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেটি কিন্তু এখন অনেকটা পরিস্কার হতে চলেছে। নতুন ভোরে যখন সূর্য উদয় হয় তখন কিন্তু ধীরে ধীরে আলো ফোটে। রাশিয়ার কাছ থেকে সাশ্রয়ী দামে তেল ক্রয়ের অপরাধে আরোপিত শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে (২৫%+২৫%) = ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। চীনের উপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন সময় সুর পরিবর্তন করেছেন। ১০০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে চলেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে দেশের উৎপাদিত পণ্য দেশের মানুষের ব্যবহারের প্রতি উদাত্ত অহবান জানিয়েছেন। আহমেদাবাদের এক জনসভায় বক্তৃতার মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ১৪০ মিনিটের ভাষণ কিন্তু অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। ভারত তার অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য বিকল্প কিছু ভাবছে।

এসিও সম্মেলন ভূ-রাজনীতির পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে সেটি কিন্তু এখন পরিস্কার। চীন চায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র অষ্ট্রেলিয়া ও জাপানের নিরাপত্তা জোট (ক্য়োড) যতটা সম্ভব দুর্বল হোক। তাই জিনপিং বেইিজং নয়াদিলির উন্নয়ন ও সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমরা একই সময়ে উন্নয়ন ও পুর্নজাগরণের পথে রয়েছি। আমাদের উচিত উন্নয়নকে সবচেয়ে বড় মিল হিসেবে দেখা। একে অপরকে এগিয়ে নেওয়া।

গত অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মোদি ও জিনপিংয়ের সাক্ষাতের পর দুদেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। দুদেশের মধ্যে সরাসরি পুনরায় ফ্লাইট চালু হচ্ছে। তিব্বতের বাইলাশ মানস সরোবর তীর্থ যাত্রা ভারতীয়দের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশই পর্যটন ভিসা ইস্যু শুরু করেছে। চলতি মাসেই চীনের শীর্ষ কূটনীতিকদের দিল্লি সফরের পর দুই দেশ ১ টি সমঝোতা ঘোষণা করেছেন।
তারপর কথা থেকে যায় ২০২২ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২ ভারতীয় ও চীনা সেনা নিহত হয়েছিলেন। এখনও সীমান্তে দুই পক্ষের ব্যাপক সেনা মোতায়েন রয়েছে।

এত কিছুর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জিনপিং বলেছেন, দুই দেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হলো এক সাথে পথ চলা। এই পথ হবে বন্ধুর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়াদিল্লি। এই সম্মেলনে মোদি পুতিনের বৈঠক হতে চলেছে। যেটির জন্য সাড়া বিশ্ব অপেক্ষা করছে। যেখানে অনেকটা কৌশল অবলম্বন করে হয়ত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানার জন্য আহবান জানাবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে শান্তির আলোচনা প্রস্তাব দিতে পারে নরেন্দ্র মোদি।

সব মিলিয়ে ভারত চীন রাশিয়ার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে চলেছে। পূবের শক্তির মহাসমাবেশ ঘটে তাহলে ওয়াশিংটনকে নতুন করে ভাবতে হবে। ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকনীতি আদালত দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। দিন যাচ্ছে ভূ-রাজনীতি পরিবর্তিত হচ্ছে। উপমহাদেশকে এখন ভাবতে হবে নতুন করে ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *