বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

সাংবাদিক নির্যাতন মামলা : সাবেক কুড়িগ্রাম ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে

|| কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ||

কুড়িগ্রামের বহুল আলোচিত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি ও সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন এবং তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলাটির তদন্ত শেষে গত ২৮ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চার্জশিট দাখিল করে। সেখানে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনসহ তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির নয়টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

২০২০ সালের ১৩ মার্চ গভীর রাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তার বাড়ি থেকে তুলে নেয় জেলা প্রশাসনের একটি বিশেষ দল। প্রথমে তাকে ধরলা ব্রিজ এলাকায় নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর অর্ধ বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা রাখার মিথ্যা অভিযোগ দেখিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সুলতানা পারভীনসহ জড়িত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা। তবে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর মামলার কার্যক্রম বারবার বাধাগ্রস্ত হয় আসামিদের প্রভাব ও প্রশাসনিক পদে বহাল থাকার কারণে।

অবশেষে পিবিআই’র তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় চার্জশিট আদালতে জমা পড়ে এবং মঙ্গলবার আদালতের আদেশে মামলার প্রধান আসামি কারাগারে গেলেন।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম বলেন, “পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ প্রধান আসামি কারাগারে যাওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতিতে এক বড় পদক্ষেপ দেখা গেল।”

মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, এ মামলা শুধু একজন সাংবাদিকের ওপর নির্যাতনের বিচার নয়, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আদালতের এ সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচারের পথে নতুন আস্থা তৈরি করবে বলে তারা আশা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *