
|| আবির হোসেন | ইবি প্রতিনিধি ||
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনার পক্ষ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হুমকি-ধমকি ও হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমরা ৩৩ শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে শোকজ নোটিশ দিয়েছি। বাকি ১১ জন কর্মকর্তার বিষয়ে এখনো উপাচার্য কিছু জানায়নি। এরআগে রবিবার একই বিষয়ে ১৯ শিক্ষককে শোকজ করা হয়। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষক, কমকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। প্রতিবেদন সূত্রে, তারা ৫ আগস্টের আগে আন্দোলন দমনে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিভিন্নভাবে হলে হলে সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতন চালায়। হলসমূহের বিভিন্ন কক্ষে দেশীয় ও আগ্রেয়াস্ত্র জমা করেন। শিক্ষার্থীদেরকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য ককটেল ও বোমা বিস্ফোরন ঘটায়। শিক্ষার্থীদেরকে মারপিট করে এবং জোড়পূর্বক ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে বাধ্য করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রবেশ করে হুমকি প্রদান করে এবং আন্দোলন বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। আন্দোলনকারীদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলেন— ছাত্রলীগ কর্মী বিপুল খান, সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, সহ-সভাপতি মুন্সী কামরুল হাসান অনিক, শিমুল খান, রতন রায়, মৃদুল রাব্বী, মাসুদ রানা (ইংরেজি), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসাইন মজুমদার, মেহেদী হাসান হাফিজ, শাহীন আলম, ফজলে রাব্বী, তরিকুল ইসলাম, আইন সম্পাদক শাকিল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়াফত হোসেন রাকিব, শেখ সোহাগ, মেজবাহুল ইসলাম, রাফিদ হাসান, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক কুমার, সাহিত্য সম্পাদক আব্দুল আলিম, ক্রীড়া সম্পাদক বিজন রায়, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সদস্য পিয়াস মোস্তাকিন, উপ-কারিগরি সম্পাদক ফারহান লাবিব ধ্রুব, উপ-পাঠাগার সম্পাদক ওয়ায়েসুর রহমান প্রাঞ্জল, প্রচার সম্পাদক নাবিল আহমেদ ইমন, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক সাদিদ খান সাদি। এছাড়াও ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শাওন, অর্থনীতি বিভাগের তানভীর, সমাজকল্যাণ বিভাগের মারুফ ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের আদনান আলিম পাটোয়ারী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ইমামুল মুত্তাকী শিমুল ও মনিরুল ইসলাম আসিফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা হলের ছাত্রদের অমানবিক নির্যাতন, পুলিশি হয়রানী, দমন-পীড়ন, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, ককটেল ও বোমার নাটক সাজিয়ে নির্দোষ শিক্ষার্থীদেরকে ফাঁসানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের অন্যতম নেতৃত্বপ্রদানকারী ও পরিকল্পনাকারী, চক্রান্তকারীর ভূমিকা পালন করেন। অভিযুক্ত ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন— প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার আলমগীর হোসেন খান, আব্দুল হান্নান, ইব্রাহীম হোসেন সোনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের এবং কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দপ্তরের আব্দুস সালাম সেলিম, মাসুদুর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের উকীল উদ্দিন, ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের তোফাজ্জেল হোসেন ও জনসংযোগ দপ্তরের আবু সিদ্দিক রোকন। তারা ৩ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্র ও ৪ আগস্ট আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মিছিলে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন মারমুখী আচরণ এবং আন্দোলনবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিতকরণের জন্য গত ১৫ মার্চ ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন। সদস্য ছিলেন আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিন্নাতুল করিম এবং সদস্য সচিব ছিলেন বিএনসিসি অফিসের উপ-রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান মজুমদার।