রবিবার, আগস্ট ১৭

নেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন, আমরণ অনশনে বসতে যাচ্ছে বেরোবি শিক্ষার্থীরা

|| বেরোবি প্রতিনিধি ||

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে অন্তর্ভুক্তি ও নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবিতে আমরণ অনশনে বসছেন শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৭ আগস্ট) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বেশ কিছুদিন থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্র সংসদ চেয়ে হলে ও বিভাগে শিক্ষার্থীদের নিকট লিফলেট বিতরণ, উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নানান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।

তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা প্রশাসনকে অনেক সময় দিয়েছেন কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাননি। তাই তারা কঠোর কর্মসূচির চিন্তা ভাবনা করছেন।

সর্বশেষ তারা উপাচার্যকে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন, সেই আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পরও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখায় রবিবার থেকে তারা আবারও অনশনে বসছেন।

আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সংসদের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে ব্রাকসু নির্বাচন নিয়ে তাদের যৌক্তিক দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জানিয়ে আসছে এবং বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে। তবে পরিতাপের বিষয়, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দাবির যৌক্তিক সুরাহা টানতে পারেনি বা শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায় এমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগামীকাল থেকে অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করবেন বলে আমি আশা করি। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে, এ দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।

ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এমনকি কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ৯ দফার অন্যতম ছিল— প্রত্যেক ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু, জুলাই বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও, আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যমান কিছু দেখতে পাইনি। ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়। কিন্তু প্রায় তিন মাস সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ৩৬ দিনে আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, কিন্তু ছাত্র সংসদের মতো যৌক্তিক বিষয়ের জন্যও আমাদের দীর্ঘসূত্রিতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে— এটি শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত হতাশার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দাবি আদায়ের লক্ষে আগামীকাল থেকে আমরণ অনশন এ বসতে যাচ্ছি আমরা।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হয়েছে, তাদের পূর্ব থেকেই আইন পাস করা ছিল। আমরাও ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় খসড়া করে ইউজিসিতে পাঠিয়েছি। ইউজিসি একটি কমিটি করেছে, যেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জনকে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউজিসি সেই খসড়া শিক্ষামন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে গেলেই চূড়ান্ত হবে। এরপর আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারব।

রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা নীতিমালা করেছি। এখন এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। এইটা তো আর আমাদের হাতে না। আমরা আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা এইটা বুঝবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত বছর আইন করে দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপরই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার জন্য দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার। নতুন উপাচার্য নিয়োগের প্রায় দশ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি ছাত্র সংসদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *