
|| জাকারিয়া শেখ | ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||
মা-বাবার বুকের ধন ছয় মাস বয়সের দুধের শিশুটি—ফরহাদ। জন্ম থেকেই ফুটফুটে এই শিশুটি বিরল পায়ুপথের সমস্যায় ভুগছে। সংকীর্ণ পায়ুপথের কারণে তার নিয়মিত মলত্যাগ হয় না; ৮-১০ দিন অন্তর ওষুধ দিয়ে পায়খানা করাতে হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত পেট ফুলে থাকে, যন্ত্রণায় ছটফট করে অবিরাম কেঁদে চলে। শিশুর এই অসহনীয় কষ্ট দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা-বাবা। কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ।
চিকিৎসকরা ফরহাদের জীবন বাঁচাতে তিনটি অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে ধার-দেনা করে ও সর্বস্ব বিক্রি করে দেড় লাখ টাকায় প্রথম অপারেশন করানো হয়েছে, কিন্তু তাতে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এখনো বাকি রয়েছে আরও দুটি বড় অপারেশন, যার জন্য প্রয়োজন প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এ টাকা জোগাড় করা ফরহাদের পরিবারে পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এই চিন্তায় বাবা-মায়ের চোখে ঘুম নেই, হৃদয়ে অস্থিরতা।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের বালাটারি গ্রামের রাজমিস্ত্রি মোকছেদুল হক ও ফরিদা বেগম দম্পতির সন্তান ফরহাদ। আগে মোকছেদুল রিকশা চালাতেন, কিন্তু ছেলের চিকিৎসার জন্য সেটিও বিক্রি করতে হয়েছে। তার আয়ে ৪ সদস্যের সংসার চলে, কিন্তু এখন ছেলের চিন্তায় কাজে মন বসে না। সম্বল বলতে মাত্র তিন শতক জমির ওপর হাফ-ওয়াল করা টিনশেডের দুই কক্ষের একটি ঘর। এর মধ্যেই চলে তাদের সংসার।
শিশু ফরহাদের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়ে ফরহাদের মা-বাবা সমাজের বিত্তবান ও মানবিক মানুষের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, সবার সামান্য সহায়তাই তাদের ছেলেকে নতুন জীবন দিতে পারে।
এলাকাবাসীর কয়েকজন—আশরাফুল হক, ইমান আলী ও আকলিমা বেগম জানান, “ফরহাদের বাবা-মা অত্যন্ত গরিব। দিনমজুরির আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে।
জন্ম থেকেই বাচ্চাটি অসুস্থ। চিকিৎসায় অনেক টাকা লাগছে, যা তাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, শিশুটির পাশে দাঁড়ান।”
ফরহাদের বাবা-মা আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, “আমাদের জমা-পুঁজি কিছু নেই। ধার-দেনা করে একটি অপারেশন করিয়েছি। ডাক্তার বলেছেন, বাকি দুটি অপারেশন না করলে ছেলেকে বাঁচানো যাবে না। চার-পাঁচ লাখ টাকা দরকার, যা আমরা কোনোভাবেই জোগাড় করতে পারছি না। সমাজের সকলের কাছে অনুরোধ, একটু সহায়তা করুন—আমাদের বুকের ধনকে বাঁচিয়ে দিন।”
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওয়ালীউল্লাহ মন্ডল বলেন, “শিশুটিকে দেখে মনে হয়েছে, সে খুব অসুস্থ। পরিবারটিও অত্যন্ত অসহায়। তারা লিখিত আবেদন করলে তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে।”