
|| শেখ শাহরিয়ার | খুলনা প্রতিনিধি ||
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রূপান্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, অতিমাত্রায় প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহারের কারণে সুন্দরবনের অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মুখোমুখি পৌঁছেছে। সুন্দরবন অঞ্চলে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে এখুনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগকে সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে যুব সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
সোমবার (৩০ জুন) সকালে জার্মান সরকার ও হেলভেটাস জার্মান-এর সহায়তায় রূপান্তর ইকো সুন্দরবন প্রকল্পের আওতায় পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে “প্লাস্টিক দূষণ আর নয় বন্ধ করার এখনই সময়” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রূপান্তর-এর নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল, খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক এবং নাগরিক ফোরাম, খুলনার মহাসচিব এস এম ইকবাল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোল্যা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান। মুক্ত আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। অনুষ্ঠানের শুরুতে রূপান্তর থিয়েটার শিল্পীরা পটগান পরিবেশন করেন। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে পঠিত মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, সুন্দরবন ও তার সংলগ্ন নদ-নদী, খাল-বিল এবং বনাঞ্চলে প্রতিনিয়ত যেভাবে প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলা হচ্ছে, তাতে এই অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মুখে পড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের নদী ও খালের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতি প্রায় শতভাগ, অর্থাৎ ১০০% পর্যন্ত। এই প্লাস্টিক কণা জলজ প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করছে- মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি এবং অন্যান্য প্রাণী প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা প্রাণীদের শরীর থেকে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে এবং দীর্ঘমেয়াদী নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে যেমন ক্যান্সার, হরমোনজনিত সমস্যা, প্রজনন স্বাস্থ্য সংকট ইত্যাদি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে মাথাপিছু গড় প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন প্রায় ১৫.৬৩ কেজি, যা’ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বিশ্ব পরিবেশের জন্যেও একটি অশনিসংকেত। এই পরিস্থিতি এখন শুধু একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য এক চূড়ান্ত হুমকি। প্লাস্টিক ও পলিথিন প্রতিরোধে আমাদের পরিকল্পিত, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।