
|| বাপি সাহা | উন্নয়নকর্মী ||
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় লক্ষাধিক প্রাণ বিসর্জন হয়েছে, যদিও আরববিশ্ব চুপচাপ, যা সকলের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ শিবিরে খাদ্যের জন্য যাওয়া মানুষের উপর হামলা মানব ইতিহাসে নজীর হয়ে থাকবে। দুগ্ধপোষ্য শিশুর মৃতদেহ যখন পিতার কোলে সেই দৃশ্য কতটুকু আবেগতারিত সেই প্রশ্ন রাখতে চাই বিশ্বের বিবেকবান মানুষের কাছে। প্রতিবাদের ফলশ্রুতিতে সুপরিকল্পিতভাবে ইসরায়েল ইরানের উপর পারমাণবিক স্থাপনার হামলা চালায়। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দোষী সাবস্ত্য করে কোন প্রতিবাদ জানায়নি সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের সংগঠন জাতিসংঘ। ইরান যখন পাল্টা হামলা চালায় নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বা নিজের শক্তি প্রকাশ করার জন্য তখন সংঘাত বন্ধের আহবান জানানো হয়।
ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প হুংকার ছেড়ে দিয়ে হামলা বন্ধের এবং পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধের জন্য ইরানের প্রতি সতর্ক বার্তা প্রেরণ করেন। অনেকটা জোরেসোরে তিনি দুই সপ্তাহ সময়ের অপেক্ষার কথা বলেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী পর্যায়ে যে সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ করেছেন, তার অনেকগুলিই ছিল বিতর্কিত। ইউএসএআইডি সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া, এই দাতা সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা, মার্কিন করনীতি এবং ইলান মাস্কের সাথে বিতর্কে জড়িত হওয়া সবকিছু মিলিয়ে লেজেগোবুরে করে ফেলা এবং অবশেষে রণে ভঙ্গ দেওয়া। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে মার্কিন বোমারু বিমান হানা মার্কিন প্রেসিডেন্টের হটকারী সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বকে অবাক করে দেয়। লেখার মাঝখানে একটি উল্লেখ করতেই হয়। ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত হালমার পরবর্তী পর্যায়ে সৌদি আরব একটি বিবৃতি প্রদান করে দায় সেরেছে। ইরান একলা চলো নীতি নিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে, যা বহির্বিশ্বকে অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছিল। রণে ভঙ্গ দেওয়া মানুষটি অনেকটা আঁচ করতে পেরেছিলেন এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হতে চলেছে। আবারও অনেকটা হঠাৎ করে দুটি রাষ্ট্রকে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব প্রদান করে বার দিনের এই সংঘাতের অবসানের দিকে এগিয়ে যায় বিশ্বের এই দুটি রাষ্ট্র।
ইসারায়েলের এই আক্রমণ চলাকালীন সময়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপর আক্রমণ কিন্ত বন্ধ হয়নি। গত ২৫ জুন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮৭০ জন ফিলিস্তিনি। মানবিকতার চরম পর্যায়ে কিছু রাষ্ট্র তার অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ, ভারত তার অবস্থান ইরানের পক্ষে এবং ইসরায়েলের আচরণের বেশ সমালোচনামুখর হয়ে উপমহাদেশের সাধারণ জনগণ পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ ইরনের প্রতি এই অযাযিত আচরণের বিপরীতে অবস্থান নিলেও রাষ্ট্র কিন্ত পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে তার অবস্থান জানাতে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে মার্কিন মুলুকে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব দেন যা ছিল হাস্যকর এবং বিবেকহীন মানুষের সংলাপ। এই উপমহাদশের দুটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত যে ভূমিকা রেখেছে সেটি নিয়ে ইরান খুশি। এবং সমর্থন প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিরও পরিবর্তন হয়েছে, যা ছিল ইতিবাচক। ইরান বাংলাদেশ ভারতের পরীক্ষিত, কিন্তু পাকিন্তান তার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পররাষ্ট্রনীতিতে ভুল করেছে বলে মনে হয়। ইরান দূতাবাসের বার্তায় সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে, “এই সংহতি শুধু রাজনৈতিক অবস্থানের প্রকাশ নয়, এটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার, শান্তি ও আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।’’ উপমহাদেশে ভারতের এই অবস্থান মুসলিম বিশ্বের সাথে তার সম্পর্ক দৃঢ় করবে। বাংলাদেশ অনেকটা উদ্যোগী হয়েছে ভারত – বাংলাদেশ সম্পর্কের পুন!বিন্যাসে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বা সম্পর্কের ইতিবাচক অবস্থান তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত চেয়ে ইতিমধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সদস্য ছিলেন বাংলাদেশে ভারতীয় দুতাবসের সাবেক রাষ্ট্রদূত রীভা দাস গাঙ্গুলী। রীভা দাস গাঙ্গুলী বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ছিলেন এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষের সাথে তার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি হয়ত দিল্লীর পররাষ্ট্রনীতির নীতিনির্ধারকদের বোঝাতে সক্ষম হবেন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে। কোলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-হাইকমিশনার দেখা করেছেন পশ্চিমবাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সাথে যা এই মূহুর্তে একটি ইতিবাচক দিক।
উপমহাদেশে নিজেদের সম্পর্ক যত শক্তিশালী হবে, আমরা কিন্তু ততই পারব বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অগ্রগামী হতে। রাজনীতি হবে কিন্তু দেশকে বাদ দিয়ে নয়। আমাদের পোশাক শিল্পসহ অনেকগুলি রপ্তানীমূখী প্রতিষ্ঠান চাপের মুখে রয়েছে। নিজেদের অবস্থান শক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে। এই লেখাটি যখন তৈরি করা হচ্ছিল তখন প্রচার মাধ্যমে খবর এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস-এর সাথে কথা বলেছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসলেও দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ও আলোচনায় উঠে এসেছে। পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘাত মার্কিন সন্ত্রাসবাদের পরবর্তী পর্যায়ে ইরানের সাহাসী পদক্ষেপ অনেকটা পরিবর্তন এনেছে তাদের হুশ হয়েছে বলেই এখন গাজায় যুদ্ধ বিরতির কথা বলছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক হলেও সত্য যে যুদ্ধ বিরতি তার সাথে হয় যে যুদ্ধ করে। ফিলিস্তিন-এর গাজাবাসী যুদ্ধ করছে ক্ষুধার সাথে, আশ্রয়ের জন্য, নিজের শিশু সন্তানের নিরাপত্তার জন্য।
বিশ্ব এখন এগিয়ে চলেছে। হরমুজ প্রণালী আংশিক বন্ধের ফলে তেলের বাজার উর্দ্ধমুখী হয়েছিল। সংকট মোকাবেলা করতে হবে সম্মিলিতভাবে। ইতিমধ্যে মালোশিয়ায় এক অভিযানে ৩৬ জন বাংলাদেশী গ্রেফতার হয়েছে। একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে তারা আইএসএস-জড়িত রয়েছে যা আমাদের জন্য দুঃখজনক।
এখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, মার্কো রুবিও -এর ফোনালাপ ও উপমহাদেশের রাজনীতি পরিবর্তন আমাদের ভাবতে হবে।
লেখক: বাপি সাহা, উন্নয়নকর্মী, খুলনা।