শনিবার, অক্টোবর ১১

থানচিতে গৃহবধূ চিংমা খোয়াং হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ

|| শাকিবুল হাসান | রাবি প্রতিনিধি ||

বান্দরবানের থানচিতে গৃহবধু চিংমা খেয়াংকে গণধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৭ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের ‘সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

এর আগে, বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে বিক্ষোভকারীরা ‘বান্দরবানে ধর্ষণ কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই, সারাদেশে নারী নির্যাতন, বন্ধ করো করতে হবে, আছিয়া থেকে চিংমা, খুন ধর্ষণ আর না, খুন ধর্ষণ যেখানে, লড়াই হবে সেখানে, নির্যাতকের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, পাহাড় থেকে সমতলে, লড়াই হবে সমানতালে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা মুজিব থেকে ইউনুস পর্যন্ত কোনো সরকারই পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, প্রতিটা সরকার পাহাড় এবং সমতলের জন্য দুই নীতি বহাল রেখেছে, দেশ থেকে স্বৈরাচার পলায়ন করলেও স্বৈরাচারের বৈশিষ্ট্য এখনো বিদ্যমান রয়েছে ইত্যাদি মন্তব্য করেন।

এসময় রাবি ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার বলেন, আমরা কার কাছে বিচার চাইবো, মুজিব থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার পর্যন্ত কেউই পাহাড়িদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি, পাহাড়িদের মানুষ বলে স্বীকৃতি দেয়নি। তাদেরকে এই রাষ্ট্র তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রেখেছে। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদিবাসীদের আন্দোলনে নির্মমভাবে হামলা করেছে। তবুও আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আশা রাখতে চাই তারা যেন এর সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করে।

রাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, অভ্যুত্থানের পরেও বারবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলছে। আমরা মনে করি এই ধর্ষণের কারণ নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব। ধর্মীয় একটি গোষ্ঠী এই মনোভাব লালন করে আর রাষ্ট্র সেটাকে নানাভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে। রাষ্ট্র যদি এভাবে অন্যায়কে সহায়তা করে তাহলে দেশে ধর্ষণ, হত্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক। আমরা দেখেছি ৫ তারিখের পরও এক দেশে দুই নীতি চলছে। আদিবাসীরা যখন আন্দোলন করেছে সরকার তাদের ওপর হামলা করেছে অথচ অন্যদিকে কতিপয় বট বাহিনী, মব বাহিনীর অযৌক্তিক দাবি মেনে নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। তাই দেশের স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাবি শাখার সভাপতি সামিন ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলো সাধারণ ব্যাপার নয়। পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে। সারাদেশে নারীর প্রতি যে বিদ্বেষী মনোভাব তা পাহাড় থেকে শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সরকার পাহাড়িদের মুক্ত অদৃশ্য কারাগারের মধ্যে বন্দি রেখেছে। বাঙালিরা মনে করে পাহাড়িদের ভাবভঙ্গি চিড়িয়াখানার নিরীহ প্রাণীদের মতো। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে যে নিপীড়ন চলছে এটা তাদের একটা অনুশীলন। সমতলে যে শাসন ব্যবস্থা তা পাহাড়ে হচ্ছে না। একদেশে দুই নীতি কখনো কাম্য নয়। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই পাহাড় থেকে সমতলে অভিন্ন নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং এই হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন রাবি ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন রাবি ছাত্র ও যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *