
|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক ||
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মূল কারিগর ইরানের মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ আবারও দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইরনা রোববার জানিয়েছে, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা জানানোর কয়েকদিন পরই এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটল।
ইরনা আরো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জাভেদ জারিফের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন, তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
জারিফের পদত্যাগের খবর এমন সময় এলো, যখন দেশটির পার্লামেন্ট অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে পেজেশকিয়ান প্রশাসনের অর্থমন্ত্রীকে বহিষ্কার করেছে। আইআরজিসি-ঘনিষ্ঠ ফার্স নিউজ দুটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়েছে এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা (ইসনা) জানায়, জারিফের পদত্যাগের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর অভিশংসনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি অনাস্থা ভোটের আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন।
ইসনা আরও জানায়, প্রেসিডেন্টকে দেওয়া পদত্যাগপত্রে জারিফ উল্লেখ করেছেন তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে ইরানের সেবা করতে চান।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পেজেশকিয়ান প্রশাসনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে জারিফ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে একটি পরমাণু চুক্তি করার চেষ্টা করছিলেন, যেটি ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাতিল করেছিলেন।
কিন্তু গত মাসে সর্বোচ্চ নেতা খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এটি বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বিচক্ষণতার পরিচয়ও নয়, বরং এটি সম্মানের পরিপন্থি।
রবিবার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, তবে খামেনির সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছেন।
পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম, আলোচনা করাই ভালো হবে, কিন্তু যখন সর্বোচ্চ নেতা বললেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করব না, তখন আমিও বলেছি— আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনা করব না, ব্যস।
জাভেদ জারিফের জন্য পদত্যাগ করা নতুন কিছু নয়। তিনি আগেও বারবার পদত্যাগ করেছেন এবং অনেক সময় আবারও ফিরে এসেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শাসনামলে তিনি পাঁচবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন।
গত আগস্টে তিনি পেজেশকিয়ানের সহকারী পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভাইস প্রেসিডেন্ট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স হিসেবে ফিরে আসেন।
নভেম্বরে পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ ও কট্টরপন্থিরা জারিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। কালিবাফ বলেছিলেন, জারিফের নিয়োগ অবৈধ এবং তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত।
কট্টরপন্থি পায়দারি পার্টির নেতৃত্বাধীন সংসদ সদস্যরা ২০২০ সালে পাস হওয়া একটি আইন সংশোধনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্যক্তিরা বা যাদের স্ত্রী-সন্তান বিদেশি নাগরিকত্ব নেন, তারা সরকারে কোনো ‘সংবেদনশীল’ পদে থাকতে পারবেন না। কট্টরপন্থিরা দাবি করেন, এই আইন জারিফের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।