
|| আব্দুল হামিদ সরকার ||
স্মৃতিগুলো আজ সময়ের প্লাবনে নিমজ্জিত
এ যেন ধূসর সাহারা মরুভূমি সম,
প্রীতিটুকুও আজ সময়ের ভারে কুজো।
প্রিয়জনেরা দুরত্বের বলয়ে করে বসবাস
দীর্ঘশ্বাসের বড্ড বয়স হয়েছে
দূ্র্বীন ছাড়া বর্ণমালা দেখা ভার
ভূমিকম্পের মতো কম্পমান মোর হস্তখানা
কন্ঠস্বরও নিম্নগামী, এ কন্ঠের নাহি মেলে শ্রোতা
স্বপ্নগুলোও আমার সনে নাহি করতে চায় বসবাস
পালিয়ে বেড়ায় তারা যোজন যোজন দূরে।
হাতছানি দিয়ে ডাকলেও নাহি প্রত্যুত্তর
মাথার কেশগুলো যেন কাশফুলের ডগা
উদাসমনে চশমার ফাঁকে স্যাতস্যাতে দু’টি চোখ,
গ্রন্হীলপেশিগুলো যেন শিমুল তুলার মতো নরম
বাতাসের ছোঁয়ায় মূহুর্তেই উড়ে যেতে চায় আকাশপুরী।
দন্তগুলো আজ ভীষণ নড়বড়ে,
এ যেন কাদামাটিতে পুতে রাখা খাম্বা।
নাসিকার ঘ্রাণশক্তির উপর পড়েছে দুর্বলের প্রলেপ
স্বাদ ও গন্ধের নাহি আর বিভাজনী শক্তি,
লজ্জাবতী গাছের মতো গোলাপফুলও
আমার স্পর্শে যায় নুয়ে।
দুঃখ আর অভিমান ভাঙাতে কেউ আসে না নৈকট্যে,
স্বপ্নের ফুলশয্যায় মেহেদী রাঙা হাত এখনো খুঁজি
সোনাঝরা হাসির নায়িকা কেবলই যে নিরুদ্দেশ।
আমি আমাকে খুঁজে হয়ছি বড্ড পেরোশান
জীবন সিলেবাসের শেষ অধ্যায় যেন দিচ্ছে উঁকি।
হৃদপিণ্ডে বাস করা শব্দের এসেছে যে তন্দ্রা,
গানের কলিগুলো ফুড়ুৎ করে যায় যে উড়ে
প্রতিটি ভোর যেন রাতের মতো মনে হয়
তারুন্যের প্রচ্ছদে পড়েছে যে ভাটা
গালে টোলপড়া হাসিটাও আজ ক্লান্ত।
কলমের ডগাও করে মহাবিদ্রোহ
সৃজনীশক্তি এখনো প্রখর,
কিন্তু নৈমিত্তিক ছুটি চায় অহরহ।
জোয়ারে সিক্ত ছিলো মনের অলিগলি
ভাটার টানে আর গুঞ্জরিত হয় না মন
নীরবতার তকমা আজ সর্বশরীরে
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ঢেকুরে এখনো আছি বেঁচে।
নাতিশীতোষ্ণ মন ধেয়ে চলেছে সময়ের স্রোতে
স্রষ্টাপ্রেমে আছি মশগুল, দেশপ্রেমেও সরব
ব্যাকুল আমি মানবপ্রেমে, ধ্বনিত থাকে হিয়া।
নীরবতার সনে এখন আমার প্রেম,
মানবতা বিরোধীদের সনে নহে সাহচর্য
আবির রঙের সাথে এখন আমার মিতালী।
দৌহিত্র আরোহীর সঙ্গে চলে খুনসুটি
নরম গরম সংলাপ চলে প্রতিনিয়ত,
দৈহিক বয়স রাখিনা আর গণনার অভিধানে
মনের বয়স কুড়ি ধরেই চলে আমার পথচলা।
আবেগি মনে মানবতার স্বাক্ষর রাখি বরাবর
কিন্তু জীবন বৃক্ষের পত্র পল্লবে ধরেছে যে চিড়,
ধেয়ে চলা জীবনের এলো বুঝি উপসংহার?
লেখক: বিশিষ্ট কবি ও ঔপন্যাসিক এবং সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বেলকুচি বহুমুখী মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ। রচনাকাল: ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।