শুক্রবার, মার্চ ১৪

স্কুল-কলেজে ধর্মীয় শিক্ষা এবং আরবি ভাষা শিক্ষা কেনো বাধ্যতামূলক নয়!

প্রত্যকেটি ধর্মের মানুষের তার নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে। এবং এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। আমরা রাষ্ট্র কেনো একজন শিশুকে তার নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবো। ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা করার পর সে যদি ধার্মীক হয় সেটা রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।আর যদি না হয় সেটা তার ব্যাপার, কারণ আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি।

আমরা বর্হিঃবিশ্বে বাঙালির চাইতে মুসলিম হিসেবে বেশি পরিচিত। আর মুসলমানদের মূল ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজীদ আরবি ভাষায় এবং হাদিসে নববী ও আরবি ভাষায়। অপরদিকে ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং যোগাযোগ ও ব্যবসার ভাষা।আরবি ভাষা কি সেই তুলনায় কোনো দিকে থেকে কম? আরবিও ৩য় স্থানে রয়েছে ভাষাগত দিক থেকে এবং মর্যাদাপূর্ণ ভাষা, যোগাযোগের ভাষা, ব্যবসার ভাষা। তাই স্কুল ও কলেজে ইংরেজি শেখার ব্যবস্থা থাকলে আরবি ভাষা শিক্ষা করার ব্যবস্থা কেনো থাকবেনা? আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা এবং শ্রমশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে নিন্মমানের (মাজরায় বা খেতে) কাজ করে। অপরদিকে ভারতের শ্রম শক্তি ভাষা জানার কারণে তারা ২য় স্তরের কর্মী। তাই ব্যবসার ভাষা হিসেবে স্কুল -কলেজ এবং মাদ্রাসায় আরবির গুরুত্ব বৃদ্ধি করা দরকার। বিশেষ করে, প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্তরে ইলিমেন্টারি আরবি শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে অনেকেরই আরবি ভাষা শেখার বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতোটাই বৈষম্যপূর্ণ যে, দুইটা দুই মেরুতে সব সময় অবস্থান করে। মাদ্রাসা শিক্ষায় জেনারেলের ও বিজ্ঞানের ফকিরী অবস্থা। আবার স্কুল -কলেজে গেলে ধর্মের গরিবী অবস্থা। এই মেরু করণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের শিক্ষার্থীরা।

প্রস্তাবনা:
√প্রাথমিক স্তরে ইলিমেন্টারি আরবি ভাষা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্তা করা।

যাতে সে মাধ্যমিক স্তরে চাইলে আরবি নিতে পারে।তার আরবির দুর্বলতা,আরবি ভীতি কেটে যায় এবং মুসলিম হিসেবে ভাষাটা শিখতে পারে।

√ইসলাম শিক্ষা বইকে আরো মডিফাইড করা।
বিশেষ করে তাওহীদ, আকাইদ, ইমান, ইমান ভঙ্গের কারণ, ইসলামের পরিচয়,মুসলিমের পরিচয়, নবি-রসূলদের পরিচয়, তাঁদের দাওয়াতী মিশন ইত্যাদি সংযুক্ত করা।

√প্রাথমিকে সকল ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা।

√ বিশুদ্ধ কুরআন মাজীদ শিক্ষা দেওয়া এবং আমপারা হিফজ করানো।

√একজন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ করা।

√মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত যে কোনো এক ক্লাসে আরবি বিষয় বাধ্যতামূলক করা। যেমন অনার্সে একটা কোর্স সংযুক্ত হলে সেই কোর্সে পাশ করলে পরবর্তী সেমিস্টারে সেই কোর্স আর থাকেনা। এর উদ্দেশ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজার দখল করা। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি করা।

√ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ইসলাম শিক্ষা বইয়ের বিষয়বস্তু আরো মডিফাইড করা। যা পড়ে একজন শিক্ষার্থী নিজের মুসলিম পরিচয়টা সঠিকভাবে জানতে পারে। একজন প্যাকটিচিং মুসলিম হয়। দেশ থেকে চুরি, দুর্নীতি, মাদক, ইভটিজিং ইত্যাদি দূর হয়। সে যখন সরকারি আমলা হবে অথবা দেশের সেবক হবে তখন নৈতিকতা ও সততার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করে।

√বর্তমানে মাধ্যমিকের যে আবরি বইটা আছে সেটা ভাষা শিক্ষা করার উপযোগী না।তাই বইটা আরব লেখকদের (যারা অনারবদেরকে আরবি শেখান) ম্যাথড অনুযায়ী পূনরায় রচনা করা।

ধর্মীয় দিক থেকে মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো ইসলামের মৌলিক জ্ঞান ও প্রাথমিক আরবি ভাষা (লেখা, পড়া, বলার যোগ্যতা) নিশ্চিত করা।

সকল মুসলমান ও মুসলিম সন্তানদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা নেওয়া ও দেওয়া পরিবার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও ফরজ কাজ। সে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী হোক আর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হোক। এটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই প্রদান করবে।

আর আরবি ভাষা ও তাজবিদ শিক্ষা করা ইমাম ইবনে তাইমিয়াহসহ বেশ কিছু ইসলামিক স্কলার ওয়াজিব বলেছেন ।

আমি কোনো একজন শিক্ষার্থীকে সিস্টেমের কারণে বঞ্চিত করবো?
আমরা অনেক কিছু শিক্ষা দিচ্ছি (শিল্প ও সংস্কৃতি, ইংরেজি) তাহলে ধর্ম শিক্ষা দিতে সমস্যা কী?

যদি ধর্ম শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি। তাহলে এর মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, ইভটিজিং ইত্যাদি দূর করা এমনিতেই সম্ভব হবে। দেখা যায় আমরা খুব ভালো ও কঠিন প্রশ্ন করার মাধ্যমে বিসিএসসহ সকল নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কর্মচারী নিয়োগ করি। কিন্তু দুর্নীতি কি কমেছে, চুরি কি কমেছে ? উত্তর আসবে না!

এদেশের শিক্ষিত লোকদের চুরি, দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে এবং তাদের শাস্তি হলে অন্যরা এমনিতেই ভয়ে ভালো হয়ে যেত।

একজন শিক্ষার্থী প্রাইমারি লেভেলে আরবি ভাষা শিক্ষা করলে (আরবি ভাষার নূন্যতম অক্ষর জ্ঞান থাকলে) সে পরবর্তীতে যে কোনো সময় ইচ্ছে করলে মাদ্রাসায় ভর্তি হতে পারে। মাদ্রাসা শিক্ষায় জেনারেলেরদের ভর্তি করানোর পথ কেনো বন্ধ? একজন শিক্ষার্থী প্রাইমারি থেকে পাশ করে মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে শিক্ষা জীবন সফলতার সাথে শেষ করে। তাহলে একজন শিক্ষার্থী কেনো মাধ্যমিক স্তরে তথা দাখিল স্তরে ভর্তি হতে পারবে না।
স্কুলে আরবি বলে একটা অপশোনাল বিষয় রয়েছে। কেউ এই বিষয়টা নেয় না এবং এই বিষয়ের কোনো টিচার নেই অথচ বই রয়েছে। ঠিক প্রাথমিক লেভেল-ও একই দৃশ্য। ধর্ম বই রয়েছে কিন্তু শিক্ষক নেই। বিশুদ্ধ তাজবিদ শিক্ষা দেওয়া এই বয়সে খুবই প্রয়োজন। আর আরবি ভাষা শেখার ব্যবস্থা প্রাথমিক লেভেলে নেই বললেই চলে। তবে কিছু কিছু প্রাইভেট স্কুলে আরবি ভাষা শিখানো হচ্ছে এখন। এখন অনেকের মধ্যেই আরবি ভাষা শিক্ষা করার খুব আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে বুয়েট, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে শিখে থাকে।

তাই আর বঞ্চিত নয়; সকলের জন্য ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *