|| হাফেজ মু. হাসান জামান ||
মসজিদ অথবা মারকাজ (কেন্দ্র বা হেডকোয়ার্টার) এমন স্থান যেখানে মুসলিম উম্মাহ ইবাদত ও দ্বীনি কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকে। এসব স্থান মানুষের কল্যাণ ও শান্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যখন কোনো দল বা গোষ্ঠী মারকাজ দখল করে এবং অন্যদের আমল করতে বাঁধা দেয়, তখন তা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও নীতির পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ ধরনের কাজের দোষ ও পরিণতি তুলে ধরা হচ্ছে।
মসজিদ ও মারকাজ দখল করা এবং অন্যদের ইবাদত ও আমল করতে বাঁধা দেওয়ার ব্যাপারে কুরআন স্পষ্টভাবে নিন্দা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যারা মসজিদ নির্মাণ করেছে ক্ষতি সাধনের জন্য এবং কুফরী করার জন্য এবং মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এবং যারা পূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তাদেরকে ওত পেতে থাকার জন্য, আর তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, ‘আমরা তো ভালো উদ্দেশ্যেই নির্মাণ করেছি’, কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।” (সূরা তাওবা, ৯:১০৭)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, যদি কোনো দল বা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে, ক্ষতি সাধনের জন্য কিংবা মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য মারকাজ বা মসজিদ দখল করে, তবে তা স্পষ্টতই আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। এ ধরনের কাজের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
হাদীসে এসেছে: “যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি জুলুম করে, তার সম্পদ বা সম্মান হরণ করে, তার প্রতিদান অবশ্যই কিয়ামতের দিনে দেওয়া হবে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নম্বর: ২৫৮১)
এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কারো হক বা অধিকার হরণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। মারকাজ দখল করে অন্যদের আমল করতে বাঁধা দেওয়া স্পষ্টতই এই হক হরণের মধ্যে পড়ে।
আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: “মুসলিম এক মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না, তাকে সাহায্য না করে ফেলে রাখবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নম্বর: ২৪৪২)
এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, মুসলিমরা একে অপরের প্রতি সদাচরণ করবে এবং তাদের অধিকার রক্ষা করবে। কিন্তু মারকাজ দখল করা এবং অন্যদের আমল করতে বাঁধা দেওয়া সম্পূর্ণ এর বিপরীত।
ইসলামে মারকাজ দখল করে অন্যদের আমল করতে বাঁধা দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটি কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনার পরিপন্থী হওয়ার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব নষ্ট করে। এ ধরনের কাজ করলে আখিরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমরা অন্যায় ও পাপের ব্যাপারে একে অপরকে সহায়তা করো না।” (সূরা মায়েদা, ৫:২)
মারকাজ দখল করা এবং অন্যদের আমল করতে বাঁধা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যক্কারজনক ও গর্হিত কাজ। কুরআন ও হাদীসের আলোকে এটি স্পষ্ট যে, এ ধরনের কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নির্দেশনার সম্পূর্ণ বিরোধী। মুসলিমদের উচিত এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা।
লেখক: ইসলামী গবেষক, রংপুর।