বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের কিছুকথা (১)

এক অকল্পনীয় অবিস্মরণীয় দিন ৫ আগস্ট ২০২৪। এই দিনে বাংলাদেশে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। ছাত্রজনতার উত্তাল তরঙ্গমালা পতন ঘটায় দক্ষিণ এশিয়ার লৌহ মানবীখ্যাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই মেয়াদে ২১ বছরের রাজত্ব। একটানা ১৫ বছরের অধিককাল দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতাচর্চার পর শেখ হাসিনা এই দিন চোখের পলকে পালিয়ে যান ভারতে।

প্রথম দফা জুন ১৯৯৬-জুলাই ২০০১; দ্বিতীয় মেয়াদে ১ জানুয়ারী ২০০৯ -৫ আগস্ট ২০২৪ মোট ২১ বছর আওয়ামী লীগের শাসনকাল ছিল অপ্রতিরোধ্য। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি একদিন শেখ হাসিনার পতন হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার মসনদ ছাড়বে। প্রশাসনযন্ত্র থেকে নিয়ে পার্লামেন্ট, বিচার ব্যবস্থা, সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী ও মিডিয়াজগত হাতের মুঠোয় নিয়ে সবখানে নিজস্ব লোক বসিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন শেখ হাসিনা। সর্বত্র দমবন্ধ অবস্থা। লোকেরা ফোনে কথা বলতেও ভয় পেত, কল রেকর্ড হচ্ছে কিনা এবং তার প্রায়শ্চিত্ত গুণতে হবে কিনা।

তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে এতিমখানার টাকা চুরির অভিযোগে বছরের পর বছর কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। রোগ, বার্ধক্যে জর্জরিত খালেদা জিয়ার পরিবার অবশেষে শেখ হাসিনার অনুকম্পা ভিক্ষা করে নিজের বাড়িতে গৃহবন্দি অবস্থায় রাখার অনুমতি লাভ করে। বাংলাদেশের সবচে শক্তিশালী ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ছিল খালেদা জিয়ার চার দলীয় জোট সরকারের অংশীদার। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের থিওরি দিয়ে খালেদা জিয়াকে ছেড়ে শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নেন। এর ফলে খালেদা জিয়ার পতন ঘটে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু শেখ হাসিনা জামায়াতের এই অবদানকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি; জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে বিচার প্রহসনের সম্মুখীন করে এবং জামায়াতের ৮/১০ জন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলায় কিংবা জেলখানায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। ফলে সবার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষমতা জমিনের বুকে কারো নাই।

শেখ হাসিনার আদর্শিক শক্তি ছিল , আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এই সূত্রে স্বাধীনতার স্থপতি ছিলেন শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সামরিক অফিসারের বিদ্রোহের ফলে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। আওয়ামী লীগের শক্তিমত্তার ভরকেন্দ্র ছিল বিরাট শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সহায়তা করেছে একথা যেমন সত্য; বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত সবসময় আওয়ামী লীগকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে এ কথাও নিদারুণ সত্য। এত আয়োজন থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার বা শেখ হাসিনার এমন করুণ বিদায় কল্পনাকেও হার মানায়। (চলবে…..)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *