বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

শিক্ষার সকল স্তরে বৈষম্য বিদূরীত হোক

বাংলাদেশে দু’ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান- সাধারণ শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষা। আবার ইসলামী শিক্ষায় দুটি ধারা আলিয়া ধারা ও কওমি ধারা।

সাধারণ শিক্ষার প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত সকল স্তরেই বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছে প্রতিটি সরকার। কিন্তু ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায় বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে সেটা নেই বললেই চলে।

সাধারণ শিক্ষায় যেখানে সাড়ে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হয়েছে, সেখানে মাত্র স্বতন্ত্র চার হাজার ইবতেদায়ী মাদ্রাসার একটিও সরকারি নয়।

মাধ্যমিক স্তরে প্রতিটি উপজেলায় বর্তমানে কমপক্ষে তিন চারটি করে স্কুল সরকারিকরণ করা হয়েছে যার সংখ্যা ৬২৮টি। কিন্তু সারা বাংলাদেশে কোনো একটি সরকারি দাখিল মাদ্রাসা নেই।

স্কুল এন্ড কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ৬৩টি এবং উচ্চমাধ্যমিক কলেজ সরকারি ৫৪টি। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো একটি আলিম মাদ্রাসা সরকারিকরণ করা হয়নি।

স্নাতক (সম্মান ও পাশ) কলেজ সংখ্যা ২২৫০টি। তন্মধ্যে সরকারি হলো ৪৪৬টি। আর ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা ১৩৪৬টি।
স্নাতক সম্মান কলেজ ৭৮৮টি। আর স্নাতক ফাজিল সম্মান মাদ্রাসা মাত্র ৭৭টি। উপজেলা পর্যায়ের অনেক স্নাতক সম্মান কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে, অথচ মাত্র ৭৭ স্নাতক সম্মান মাদ্রাসার মাত্র তিনটি সরকারি।

স্নাতকোত্তর ১৯৮টি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে আর মাদ্রাসা শিক্ষায় মাত্র তিনটি স্নাতকোত্তর মাদ্রাসা ঢাকা আলিয়া, সিলেট আলিয়া এবং বগুড়া আলয়া সরকারিকরণ করা হয়েছে।

একটি বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপারে এরকম আকাশ পাতাল বৈষম্য বিষয়টি সত্যি এ দেশের জনগণকে ব্যথিত করে তুলেছে।

এপর্যন্ত কোনো দলীয় সরকারই এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো ভূমিকা পালন করেনি। অথচ এদেশের ৯০ ভাগ মুসলিম জনগণের অর্থে পরিচালিত হয় দেশের সরকার।

সব চাইতে আরো মজার বিষয় হলো গত ১৫ বছরে কোনো কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কোনো অনার্স কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে অনার্স অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

একটি সরকার কতটুকু ইসলাম বিদ্বেষী হলে এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখাতে পারে তা সহজে অনুমেয়।

বর্তমান সরকার জনগণের সরকার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বৈষম্য নিরসনের উদ্দেশ্যে গঠিত সরকার।
এ সরকারের কাছে দেশজাতির প্রত্যাশা গত ১৫ বছরে ইসলামী শিক্ষার যত ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতিপুষিয়ে দেওয়ার জন্য নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।

১. যেসব উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ নেই, সেসব স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ চালু করা।
২. প্রতিটি অনার্স কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে অনার্স চালু করা।
৩. অনার্স কোর্স পাঠদানের জন্য কমপক্ষে সাতজন করে শিক্ষকের প্যাটার্ন দেওয়া রয়েছে। দুই একটি কলেজ ছাড়া ইসলামিক স্টাডিজে মাত্র এক দু’জন করে শিক্ষক রয়েছেন।
৪. ৭৭টি মাদ্রাসায় স্নাতক অনার্স কোর্স চালু হয়েছে, কিন্তু কোথাও শিক্ষক প্যাটার্নে সাতজন শিক্ষকের নিয়োগ এবং তাদের বেতন ভাতাদির ব্যবস্থা অদ্যাবধি গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ আশু প্রয়োজন।
৫. সকল জেলায় একটি করে কামিল মাদ্রাসা, সকল উপজেলায় একটি করে ফাজিল এবং দাখিল মাদ্রাসা সরকারিকরণ।
৬. সকল ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হোক।
৭. সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে ইসলামী শিক্ষা আবশ্যিক বিষয় করা হোক। এবং কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় এ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
৮. সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হোক।

আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা শিক্ষার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। এ কারণে দেশ পরিচালনায় যারা থাকেন, তাদের অধিকাংশই ধর্মহীন শিক্ষা গ্রহণ করার কারণে তাদের মধ্যে নীতি নৈতিকতা এবং দেশপ্রেম তুলনামূলক কম থাকে। যার কারণে তারা চেয়ারে বসেই এক একজন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হন। বিষয়গুলো একটি মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য খুবই লজ্জাস্কর বিষয়।

তাই দেশে সুনাগরিক, দেশপ্রেমিক, নৈতিকতা গুণে গুণান্বিত নাগরিক গড়ে তোলার জন্যই উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশবাসীর এটাই একমাত্র দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *