শুক্রবার, নভেম্বর ২২

বারান্দায় দাঁড়ানো ৪ বছরের শিশুর চোখে লাগে গুলি, পরে হাসপাতালে মৃত্যু

৮ তলার বারান্দায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল শিশু আবদুল আহাদ (৪)। বাসার নিচে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছিল। হঠাৎ একটি গুলি আহাদের ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরে ঢুকে যায়। মুহূর্তেই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে সে।

বাবা আবুল হাসান ভেবেছিলেন হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে গেছে ছেলে আহাদ। কিন্তু তাকে তুলতে গিয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় আবুল হাসানের। ছেলের চোখ, মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। গত শুক্রবার ১৯ জুলাই বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

ছেলেকে কোলে নিয়ে দ্রুত হাসপাতাদের দিকে ছোটেন হাসান। তবে বাড়ির নিচে এলেই তাঁকে বাধা দেয় অস্ত্রধারীরা। পরে ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সরে দাঁড়ায়। আহাদকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, গুলি মাথার মধ্যে আছে। কিন্তু কোন অবস্থানে আছে, তা বোঝার জন্য সিটিস্ক্যান করতে হবে। কিন্তু সিটিস্ক্যান করতে নেওয়া হলে আইসিইউর যন্ত্রপাতি খুলে ফেলতে হবে। এতে শিশুটির মৃত্যুও হতে পারে। তবে সিটিস্ক্যান করাও জরুরি। পরের দিন শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

স্বজনরা জানান, মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বেলা তিনটার দিকে আহাদের মরদেহটি তাঁরা বুঝে পান। তারপর অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার পুখুরিয়া গ্রামে চলে যান। বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আহাদকে। আহাদের চাচা মোকলেসুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাড়িতে আগে পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হলো।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় ১১তলা ভবনের ৮ তলায় স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসান। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *